আপনি যদি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ভালোবাসেন, কিংবা নক্ষত্র দেখতে পছন্দ করেন, তাহলে ক্যালেন্ডারে ২৮ জুলাই তারিখটি গোল করে রাখুন এখনি। এই রাতটি হতে চলেছে গ্রীষ্মের সবচেয়ে দারুণ মহাজাগতিক দৃশ্যপট উপভোগ করার সময়- যেখানে একসঙ্গে দেখা যাবে উজ্জ্বল পূর্ণচাঁদ, মঙ্গলের কাছাকাছি উপস্থিতি আর ডেল্টা অ্যাকুয়ারিড উল্কাবৃষ্টির চূড়ান্ত সময়। আপনি পেশাদার নন, তাতে কিছু যায় আসে না- এই অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করতে টেলিস্কোপেরও দরকার হবে না।
১. চাঁদ ও মঙ্গলকে দেখা
২৮ জুলাই সন্ধ্যায় চাঁদ আর মঙ্গল গ্রহকে অপরের একেবারে কাছাকাছি দেখা যাবে আকাশে। এমন ঘটনা বছরে মাত্র কয়েকবারই ঘটে। মঙ্গল একটানা লালচে রঙের একটি উজ্জ্বল বিন্দুর মতো ঠিক চাঁদের পাশেই দেখা যাবে, খালি চোখেই সহজে চেনা যাবে।
যদিও বাস্তবে তারা কোটি কোটি মাইল দূরে অবস্থান করছে, আমাদের পৃথিবী থেকে তাদের অবস্থান এমনভাবে মিলে যাবে যে, এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরি হবে। চাঁদ থাকবে ‘ওয়াক্সিং গিবাস’ পর্যায়ে- প্রায় পূর্ণ, যা মঙ্গলের লালচে আলোকে আরও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলবে।
২. ডেল্টা অ্যাকুয়ারিড উল্কাবৃষ্টির শীর্ষ রাত
এই মহাজাগতিক দৃশ্যকে আরও রঙিন করে তুলবে ডেল্টা অ্যাকুয়ারিড উল্কাবৃষ্টি, যার সর্বোচ্চ পর্যায় হবে ২৮ জুলাই রাত থেকে ২৯ জুলাই ভোর পর্যন্ত। প্রতি বছর এই সময়ে এই উল্কাবৃষ্টি হয়ে থাকে এবং পরিষ্কার আকাশে ঘণ্টায় প্রায় ২০টি উল্কা দেখা যেতে পারে।
যদিও পূর্ণচাঁদের আলো কিছুটা উজ্জ্বলতা কমিয়ে দিতে পারে, তবুও এই উল্কাগুলো ধীরে চলে ও অনেকক্ষণ ধরে আকাশে থাকে। তাই আলো থাকার পরেও সেগুলো দেখা সম্ভব- বিশেষ করে ভোরের আগে যখন চাঁদ পশ্চিমে অস্ত যেতে থাকে।
৩. কেন ২৮ জুলাই এতটা বিশেষ?
একসঙ্গে এমন তিনটি বড় মহাজাগতিক ঘটনা খুব কমই ঘটে। তাই ২৮ জুলাইয়ের রাত এতটাই গুরুত্বপূর্ণ।
দৃষ্টির বৈচিত্র্য : একসঙ্গে গ্রহ, চাঁদ আর উল্কা- সবই দেখা যাবে।
সহজে দেখা যাবে : চাঁদ আর মঙ্গল শহরের আলোতেও দেখা সম্ভব। তবে উল্কাবৃষ্টি দেখতে হলে অন্ধকার কোনো জায়গায় যাওয়া ভালো।
আবহাওয়া ও সময় : গ্রীষ্মের আকাশ সাধারণত পরিষ্কার আর আবহাওয়া আরামদায়ক- আরামে শুয়ে আকাশ দেখার জন্য একদম পারফেক্ট সময়।
কীভাবে দেখবেন
অন্ধকার জায়গা খুঁজুন : শহরের আলো থেকে যতটা দূরে যাবেন, তত ভালোভাবে দেখতে পাবেন- বিশেষ করে উল্কাবৃষ্টি।
দক্ষিণ-পূর্ব দিকে তাকান : চাঁদ আর মঙ্গল সেদিকেই দেখা যাবে সন্ধ্যার পর।
রাত জেগে থাকুন : উল্কাবৃষ্টি সবচেয়ে ভালো দেখা যায় রাত ১২টার পর, যখন তারা যেখান থেকে আসে (radiant) সেটি ওপরে উঠে আসে।
চাদর বা রিক্লাইনিং চেয়ার নিন : অনেকক্ষণ ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে- আরাম যেন থাকে।
চোখকে অন্ধকারে অভ্যস্ত হতে দিন : ফোন বা অন্য কোনো উজ্জ্বল আলো থেকে অন্তত ২০ মিনিট দূরে থাকুন যেন চোখ পুরোপুরি অন্ধকারে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
২৮ জুলাই হতে চলেছে এই গ্রীষ্মের সবচেয়ে সুন্দর রাত, যখন চাঁদ, মঙ্গল আর উল্কাবৃষ্টি একসঙ্গে মিলে আকাশে এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করবে। কোনো বিশেষ যন্ত্রপাতি লাগবে না, শুধু আপনার চোখ আর একটু ধৈর্যই যথেষ্ট।
ছবি তুলুন, তারা দেখে ইচ্ছে পূরণের প্রার্থনা করুন বা নিঃশব্দে বসে মহাবিশ্বের সৌন্দর্য উপভোগ করুন- যাই করুন, এই রাতটা যেন মিস না হয়।
স্মরণে রাখুন, বাইরে যান, আর আকাশের দিকে তাকান- মহাবিশ্ব আপনাকে একটা দারুণ শো উপহার দিতে যাচ্ছে।
তথ্যসূত্র : লাইভ সায়েন্স
মন্তব্য করুন