শিশু হঠাৎ করে দুর্বল হয়ে পড়ছে? খেলাধুলায় মন নেই, সবসময় ক্লান্ত, মেজাজ খিটখিটে? এসব পরিবর্তনের পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া।
আরও পড়ুন : ওয়ান টাইম কাপে চা-কফি খেলে কি সত্যিই স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে?
আরও পড়ুন : কোমল পানীয় বেশি খেলে বাড়তে পারে চুল পড়ার ঝুঁকি
অনেকেই ভাবেন, রক্তশূন্যতা শুধু বড়দের হয়। কিন্তু বাস্তবে শিশুরাও এই সমস্যায় ভোগে, আর সময়মতো খেয়াল না করলে সমস্যা হতে পারে আরও বড়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডা. ফারাহ দোলা শিশুদের রক্তশূন্যতা নিয়ে জানিয়েছেন বিস্তারিত তথ্য।
শুধু রক্তের পরিমাণ কম থাকলেই রক্তশূন্যতা হয় না। বরং হিমোগ্লোবিন নামক প্রোটিন যদি বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী কমে যায়, তখনই ধরা পড়ে এই সমস্যা।
হিমোগ্লোবিনের কাজ হলো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া। তাই হিমোগ্লোবিন কম থাকলে শরীর ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।
লোহিত রক্তকণিকার কম উৎপাদন – যা হতে পারে আয়রন, ফলিক অ্যাসিড বা ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির কারণে।
রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়া – একে বলে হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া, থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগ এর পেছনে থাকতে পারে।
রক্তপাত – অন্ত্রে কৃমি, হিমোফিলিয়া ইত্যাদি রক্তপাতের কারণ হলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
আমাদের দেশে বেশিরভাগ শিশুর অ্যানিমিয়ার কারণ হলো আয়রনের ঘাটতি। বিশেষ করে যারা:
- অপরিণতভাবে জন্ম নেয় (প্রিম্যাচিওর বেবি)
- জন্মের সময় ওজন কম (২৫০০ গ্রাম বা কম)
- বেশি দিন শুধু বুকের দুধ খায়, কিন্তু ছয় মাস পর পরিপূরক খাবার শুরু করা হয়নি
- গরুর দুধ খায় (যেটা আয়রন শোষণে বাধা দেয়)
- কৃমি হয় নিয়মিত
- ত্বক, ঠোঁট ও হাত-পায়ের তালু ফ্যাকাশে
- সবসময় ক্লান্ত বোধ করা
- মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড় করা
- মেজাজ খিটখিটে
- খেলাধুলায় অনীহা
- মনোযোগের ঘাটতি ও শারীরিক বৃদ্ধি থেমে যাওয়া
কিছু ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে জন্ডিস, পেট ফোলা, কালো প্রস্রাব, শরীরে লাল দাগ বা গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া।
- রক্তশূন্যতার ধরন বোঝার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা, বোন ম্যারো বা ইলেক্ট্রোফোরেসিস করানো লাগতে পারে।
- আয়রনের অভাব থাকলে ডাক্তার যা পরামর্শ দেন সেই অনুযায়ী আয়রন সিরাপ/ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে।
- শিশুকে দিতে হবে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার: কলিজা, সবুজ শাক, ডিমের কুসুম, ফলমূল
আরও পড়ুন : মাইগ্রেনের ৭ অজানা কারণ
আরও পড়ুন : শরীরের ৯ লক্ষণে বুঝবেন অতিরিক্ত চিনি খাচ্ছেন কিনা
- নিয়মিত কৃমির ওষুধ খাওয়ানো জরুরি
- ৬ মাস বয়সের পর বুকের দুধের পাশাপাশি সুষম পরিপূরক খাবার খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে
শিশুদের দুর্বলতা, অলসতা বা মেজাজের পরিবর্তনকে অবহেলা না করে সময়মতো খেয়াল রাখুন। রক্তশূন্যতা ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলেই পুরোপুরি ভালো হওয়া সম্ভব।
সুস্থ শিশুই তো সুস্থ ভবিষ্যৎ! তাই সচেতন হোন।
মন্তব্য করুন