পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার ফায়দা তুলছে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমার মনে হয়, নাইজারে যা ঘটেছে এবং যা ঘটতে চলেছে, তাতে রাশিয়া বা ওয়াগনার কেউ উসকানি দেয়নি। তবে তারা এ ঘটনার ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে।’
গত ২৬ জুলাই নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে তার বাসভবনে অবরোধ করে রাখেন প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের বিদ্রোহী সদস্যরা। আটকের পরের দিন বৃহস্পতিবার সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেন তারা।
এরপরই দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের পক্ষে-বিপক্ষে সমাবেশ করতে থাকেন সাধারণ মানুষ। এমনকি সমাবেশ থেকে প্রেসিডেন্টের দলের প্রধান কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে অভ্যুত্থানের সমর্থকরা। ফলে প্রেসিডেন্ট সমর্থক ও অভ্যুত্থানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত থেকে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়।
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে উৎখাতের পর ২৮ জুলাই নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের প্রধান জেনারেল আবদোরাহমানে চিয়ানি।
আরও পড়ুন : ওয়াগনারের সহায়তা চাইল নাইজারের জান্তা
তবে তাদের এ অভ্যুত্থানকে ভালোভাবে নেয়নি আফ্রিকা অঞ্চলের ১৫ দেশের জোট ইকোয়াস। ৬ আগস্টের মধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে পুনর্বহালের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল জোটটি। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর কড়া বার্তাও দেওয়া হয়। সামরিক অভিযানের আশঙ্কা থেকে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপের সহায়তা চেয়েছে নাইজারের জান্তা সরকার।
ইকোয়াসের এই সময়সীমা শেষ হয়েছে। তবে এখনো তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি জোটটি। সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার তাদের বৈঠক করার কথা রয়েছে।
অভ্যুত্থানের পরই নাইজারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও দেয় ইকোওয়াস। কড়া হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি নাইজার সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানও চেয়েছিল ইকোওয়াস। এ জন্য তারা নাইজারে গত বৃহস্পতিবার একটি প্রতিনিধি দলও পাঠিয়েছিল। তবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় এবার সামরিক হস্তক্ষেপের দিকে হাঁটছে জোটটি।
রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপ আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে এখন অবস্থান করছে। এর মধ্যে মালি ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে তাদের হাজার হাজার সেনা রয়েছে। মালিতেও ২০২১ সালে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। এরপর ওয়াগনার গ্রুপ সেখানে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে। ওয়াগনারের সেনারা মালিতে যাওয়ার পর দেশটি থেকে ফ্রান্সের সেনাদের বের করে দেওয়া হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই ওয়াগনার গ্রুপ যে দেশে গেছে সেখানেই মৃত্যু, ধ্বংস ও শোষণের ঘটনা ঘটেছে। সে দেশে নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে।’
মন্তব্য করুন