কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বছরে ১০০ মানুষের প্রাণ ঝরে যে জঙ্গলে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে কতই না যুদ্ধ করতে হয়। একটু সুখের জন্য কতই না চেষ্টা, ত্যাগ। কিন্তু সবাই যে তাতে সফল হয়, তাও না! মানসিক দুর্বলতার কারণে জীবনের কাছে পরাজয় বরণ করেন অনেকে। আত্মহননের পথ বেছে নেন তারা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ১০ লাখ মানুষ এই নিষিদ্ধ পথে পা বাড়ান। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ঘটে একটি করে আত্মহননের ঘটনা। গোটা বিশ্বে যখন এই প্রবণতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে, ঠিক তখন জাপানে পাওয়া গেছে এমন একটি জঙ্গল, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১০০ জন মানুষ আত্মহত্যা করে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিংবা পর্যটনের জন্য নয়, জঙ্গলটি কুখ্যাত ‘সুইসাইড ফরেস্ট’ হিসেবে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, এই জঙ্গল থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১০০ মানুষের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। জাপানের টোকিও শহর থেকে ১০০ মাইল পশ্চিমে মাউন্ট ফুজির উত্তর-পশ্চিমে ৩৫ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত এই জঙ্গল। এর নাম আওকিগাহারা। এটি এতই ঘন যে একে ‘গাছের সমুদ্র’ও বলা হয়। সর্বত্রই সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে মৃত মানুষের কঙ্কাল, হাড়গোড়।

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট ব্রিজের পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে এই আওকিগাহারা জঙ্গলে। দেখা গেছে, পৃথিবীতে জাপানিদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। মানসিক স্বাস্থ্য, পারিবারিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে সেখানে আত্মহননের উচ্চ মাত্রা লক্ষ্যনীয়।

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে মনে করা হলেও জাপানে ঐতিহ্যগতভাবে আত্মহত্যার প্রচলন ছিল। সামন্ত যুগে জাপানে সামুরাই নীতিতে বিশ্বাসীরা মনে করত ‘সেপুকু’ অর্থাৎ আত্মহত্যায় মুক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে যাওয়া যায়। আধুনিক যুগেও অনেক জাপানি আত্মহত্যার ভ্রান্তনীতিতে বিশ্বাস করেন।

১৯৬০ সালে, জাপানি লেখক সেইচো মাতসুমোতো ট্র্যাজিক উপন্যাস ‘কুরোই জুকাই’ প্রকাশ করেন, যেখানে একজন ব্যর্থ প্রেমিকা তার জীবন শেষ করার জন্য ‘গাছের সাগরে’ আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। এই বইটি জাপানি সংস্কৃতিতে একটি মৌলিক এবং অশুভ প্রভাব ফেলেছিল ভেবে ধারনা করেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা ওই জঙ্গলে যারা আত্মহত্যা করেন, তাদের অনেকের পরিত্যক্ত সামগ্রীর মধ্যে সেই বইটি পাওয়া গেছে। অনেকের দাবি, জাপানি লেখক সাইকো মাটসুমোটোর ‘টাওয়ার অফ ওয়েবস’ উপন্যাস প্রকাশের পর আওকিগাহারা জঙ্গলে আত্মহত্যা বেড়ে গেছে। কারণ উপন্যাসের দুটি চরিত্র ওই জঙ্গলে আত্মহত্যা করে।

১৯৭০ সালে পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক ও সাংবাদিকদের নিয়ে একটি দল গঠন করা হয়েছিল যাদের কাজ ছিল মৃতদেহ খুঁজে বের করা এবং লোকজনকে আত্মহত্যায় অনুত্সাহিত করা। আত্মহত্যার হার কমানোর জন্য জাপান সরকার একটি আইনও পাস করে। বনের পথে জায়গায় জায়গায় সাইনবোর্ডের ব্যবস্থা করে সুইসাইড প্রিভেনশন অ্যাসোসিয়েশনগুলো। সাইনবোর্ডে লেখা হয় বিশেষ ম্যাসেজও। সুইসাইড ফরেস্টের প্রবেশপথে লাগানো হয় সিকিউরিটি ক্যামেরা, বাড়ানো হয় সতর্ক প্রহরা। বনে ভ্রমণের অনুমতি থাকলেও যে সব ভ্রমণকারী তাঁবু নিয়ে আসেন তাদের ওপর রাখা হয় বিশেষ নজর।

আশেপাশের বাসিন্দারা জানান, আওকিগাহারা জঙ্গলে রহস্যময় জাদুকরী শক্তি রয়েছে। সেই কারণে তারাই মানুষজনকে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করতে বাধ্য করে। এছাড়াও এই জঙ্গল এত গভীর যে এখানে হারিয়ে গেলে বের হওয়া খুব কঠিন। কারণ কম্পাস বা মোবাইলের মতো প্রযুক্তিও নাকি এখানে কাজ করে না।

সূত্র : টেলিগ্রাফি.কম

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডেলি ও এসিআইর যৌথ উদ্যোগে স্টেশনারি জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা

চাকরি হারালেন পুলিশের ৬ কর্মকর্তা

চকরিয়ায় মনোনয়নপত্র জমা দিলেন সালাউদ্দিন আহমদ

অপ্রতিরোধ্য সালমান খান, চমকে দিলেন ভক্তদের

আ.লীগের ১০ নেতার পদত্যাগ

ঢাকা-১০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন রবিউল

কেঁপে উঠছে গোমতী সেতু, আতঙ্কে যাত্রীরা

শীতে আপনার লোভনীয় পানীয় হাড়ের জন্য বিপজ্জনক নাতো

নতুন ৩ বিদেশিকে দলে ভেড়াল চট্টগ্রাম রয়্যালস

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে ছাত্র-জনতা

১০

তুরস্কে মৃদু ভূমিকম্প, ভূপৃষ্ঠের খুব কাছে ছিল উৎপত্তিস্থল

১১

হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ

১২

প্রত্যেকটা পয়সা ফেরত দেব : তাজনূভা

১৩

খাবারে বিষক্রিয়া; গুরুতর অসুস্থ ভারতীয় অভিনেত্রী

১৪

মেঘনায় ফের যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী জাহাজের সংঘর্ষ

১৫

এনসিপি ছাড়ার কারণ জানালেন তাজনূভা জাবীন

১৬

নারীসহ ৩ নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইন করল বিএসএফ

১৭

দল ছাড়লেন এনসিপির আরেক নেতা

১৮

গরম পানি কি সত্যিই হজম ভালো রাখতে সাহায্য করে

১৯

বহুমুখী সংকট নিরসনে ৭ প্রস্তাব তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

২০
X