দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিখ্যাত যুদ্ধজাহাজ ‘বিআরপি মিগুয়েল মালভার’ শেষবারের মতো শক্তি প্রদর্শনের আগেই সাগরের ঢেউয়ে হার মেনেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের যৌথ সামরিক মহড়া ‘বালিকাতান’ শুরু হওয়ার আগেই জাহাজটি আকস্মিকভাবে ডুবে যায়। এতে বাতিল হয়ে যায় পরিকল্পিত মহড়া।
ফিলিপাইনের নৌবাহিনী জানায়, পশ্চিম উপকূলে মহড়ার প্রস্তুতির সময় সমুদ্রের প্রতিকূল পরিস্থিতি ও জাহাজটির অতিরিক্ত বয়সের ভারে এর ভেতরে পানি ঢুকে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জাহাজটি তলিয়ে যায়।
এক নজরে বিআরপি মিগুয়েল মালভার–
জাহাজটি ১৯৪৫ সালে মার্কিন নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়ে জাপানি সাবমেরিন প্রতিরোধ ও জার্মান বন্দী পরিবহণে ব্যবহৃত হয়। ১৯৬৬ সালে এটি রিপাবলিক অব ভিয়েতনামের নৌবাহিনীতে হস্তান্তর করা হয়।
১৯৭৫ সালে সাইগনের পতনের পর ফিলিপাইনে আশ্রয় নেয় এবং ১৯৭৭ সালে বিআরপি মিগুয়েল মালভার (পিএস-১৯) নামে ফিলিপাইন নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়।
জাহাজটির নামকরণ করা হয় ফিলিপাইনের বিপ্লবী নেতা মিগুয়েল মালভার-এর নামে। জাহাজটি বহু উদ্ধার, টহল, এবং মানবিক সহায়তা মিশনে অংশগ্রহণ করে। ফিলিপাইন নৌবাহিনীর সবচেয়ে দীর্ঘসময় সেবায় থাকা যুদ্ধজাহাজগুলোর অন্যতম ছিল এটি।
২০১১ সালে তাউই-তাউই প্রদেশে একটি বিপদগ্রস্ত জাহাজ থেকে প্রায় ৬০ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে। ২০১৮ সালে তাউই-তাউইতে একটি বড় অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৫০টি পরিবারকে উদ্ধার করে এবং অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করে।
১০ ডিসেম্বর ২০২১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণ করে।
গত ৫ মে ‘বালিকাতান’ যৌথ মহড়ায় এটি লক্ষ্যবস্তু জাহাজ হিসেবে ব্যবহারের কথা ছিল। তবে ফিলিপাইনের জাম্বালেস উপকূল থেকে প্রায় ৩০ নটিক্যাল মাইল পশ্চিমে অবস্থানকালে খারাপ আবহাওয়ার কারণে পানি ঢুকে পড়ে এবং সকাল ৭টা ২০ মিনিটে এটি ডুবে যায়।
বালিকাতান মহড়া গত ২১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়। শেষ হবে ৯ মে। এই মহড়ায় প্রায় ১৪ হাজার সেনা অংশ নেয়। মহড়াটি দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়।
বিআরপি মিগুয়েল মালভারের (পিএস-১৯) উত্তরসূরি হিসেবে ফিলিপাইন নৌবাহিনী ২০২৫ সালে নতুন গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট বিআরপি মিগুয়েল মালভার (এফএফজি-০৬) গ্রহণ করে। এই জাহাজটি দক্ষিণ কোরিয়ার নির্মিত এবং এটি আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিতে সজ্জিত।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতীকী ‘শেষ অভিযান’-এ মালভার তার শক্তি দেখানোর সুযোগ না পেলেও ইতিহাসে তার অবস্থান অম্লান থাকবে। দীর্ঘকাল ধরে ফিলিপাইন নৌবাহিনীর অন্যতম অলঙ্কৃত এই যুদ্ধজাহাজ এবার চিরবিদায় নিল নিরবেই।
তথ্য সূত্র: এপি, নিউজ উইক, ওয়ার জোন, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
মন্তব্য করুন