মাটির নিচে হাজার হাজার সেনাবাহিনী। ঠিক যেন আলাদা একটি সাম্রাজ্য। শুধু সেনাবাহিনী নয়, আছে রাজপ্রাসাদও। সেনারা দুর্গদ্বার আগলে পাহারা দিচ্ছেন দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। এই বাহিনীর বেশিরভাগই মাটির বা ব্রোঞ্জের তৈরি। চীনের বিশাল এই বাহিনী গোটা দুনিয়াকে বিস্ময়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল।
দেশটির প্রথম রাজা কিন শি হুয়ান মৃত্যুর আগে নিজের সমাধিতে তৈরি করে গিয়েছিলেন এই বিশাল বাহিনী এবং রাজপ্রাসাদ। প্রাচীন সভ্যতার অনন্য নিদর্শন এই টেরাকোটা সেনাবাহিনী নির্মাণের পর প্রায় ২,০০০ বছর কেটে যায় এগুলোকে আবিষ্কার করতে।
১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে চীনের রাজকীয় শহর জি’আন এর জিইয়াং অঞ্চলের কয়েকজন কৃষক কৃষিকাজের জন্য পানি উত্তোলনের আশায় শক্ত মাটির আবরণে আবৃত একটি জায়গায় এসে দাঁড়ান। সেখানে তারা মাটির তৈরি হাত-পা এবং ব্রোঞ্জের তৈরি তীরের ফলার সন্ধান পায়। এরপর এই জায়গাটি খনন করে পূর্ণ আকারের বিশাল সেনাবাহিনীর সন্ধান পান প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
চীনের প্রথম সম্রাট ‘কিন শি হুয়াং ডি’ মাত্র ১৩ বছর বয়সে কিন প্রদেশের রাজা হিসেবে সিংহাসনে পদার্পণ করেন। এর ২৫ বছর পর ২৪৬ খ্রিস্টপূর্বে তিনি প্রতিবেশী ৬টি দেশ এবং সংযুক্ত চীন জয় করেন।
সিংহাসন অভিগমনের অল্প কিছু সময় পর তিনি নিজেই তার কবর তৈরি করেন। কবরে তার নিরাপত্তা ও পরজন্মে শাসন করার লক্ষ্যে মাটির তৈরি বা টেরাকোটার একটি বিশাল বাহিনী তৈরি করেন। ৭ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক খাঁটিয়ে ৩৬ বছর সময়ে তিনি ৮ হাজার সেনা নির্মাণ করেন।
চীনের ইতহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিখ্যাত এই সম্রাটের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো চীনা অক্ষরের প্রমিতকরণ, মুদ্রা এবং পরিমাপক ব্যবস্থার একটি মানদণ্ড প্রণয়ন। শুধু তাই নয়, কৃষি ব্যবস্থার সংস্কার এবং চীনের দক্ষিণ সীমান্ত অঞ্চলে আত্মরক্ষামূলক দুর্গ নির্মাণ করেন, যা গ্রেট ওয়াল অফ চায়না নামে পরিচিত।
রাজা কিন শির সমাধিটি শানজি প্রদেশের জি’আন অঞ্চলের কাছাকাছি লিংটনে অবস্থিত। সম্রাট নিজেই এই জায়গাটি তার নিজের সমাধি নির্মাণের জন্য নির্বাচন করেছিলেন, কারণ এই জায়গাটির আশপাশে ভূগর্ভে প্রচুর স্বর্ণ এবং মূল্যবান পাথরের বিশাল সমাহার ছিল। সমাধিটির আয়তন প্রায় ৫৬ বর্গ কিলোমিটার। ঐতিহাসিক বিভিন্ন প্রামাণ্য দলিলাদি গবেষণা করে জানা যায়, সমাধিতে হাজারো টেরাকোটা সৈন্যের সাথে চুয়ান্নটি মালগাড়ির একটি পুরো বহরও রয়েছে।
গবেষকদের ধারণা, এই সমাধি এবং সমাধির আশেপাশে মোট ৮১টি মালগাড়ির একটা বহর এখনো ভূগর্ভে অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। সমাধিটি কেবল সম্রাটের সৈন্যবাহিনী এবং কবরের স্থাপত্যের নিদর্শন নয়। ইতিহাসবিদ সিমা কিয়ানের ধারাবিবরণী অনুসারে, এই সমাধিতে একটি পূর্ণ মন্দির, ধনদৌলতসহ পারদের হ্রদ এবং বহমান নদীও থাকতে পারে।
মন্তব্য করুন