সীমান্তসহ নানা উস্যুতে জন্মলগ্ন থেকেই দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রয়েছে উত্তেজনা। এমনকি বারবার সংঘাতেও জড়িয়েছে দেশ দুটি। তবে এবার এই সংঘাত আর দুদেশের সীমানার মধ্যে হয়ত সীমাবদ্ধ থাকবে না। সম্প্রতি সৌদি আরবের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে পাকিস্তান, যার আওতায় ইসলামাবাদে কোনো ধরণের আঘাত হলে পাল্টা আঘাতে অংশ নিতে বাধ্য রিয়াদ।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ শুক্রবার ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘যদি ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, সৌদি আরব প্রতিরক্ষায় আমাদের পাশে দাঁড়াবে।’ তিনি বলেন, এই সপ্তাহে রিয়াদে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি মূলত পারস্পরিক কৌশলগত সহায়তার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।
জিও টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেন, ‘হ্যাঁ, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ তিনি ন্যাটোর ৫ নম্বর ধারার সঙ্গে চুক্তির তুলনা টেনে বলেন, যেমন ন্যাটোতে এক সদস্যের ওপর আক্রমণ মানেই সবার ওপর আক্রমণ, তেমনি পাকিস্তান ও সৌদি আরবও যৌথভাবে প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে নামবে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই চুক্তি আক্রমণাত্মক নয়, এটি শুধুমাত্র প্রতিরক্ষামূলক। ‘যদি পাকিস্তান বা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হয়, তবে আমরা একসঙ্গে প্রতিরক্ষায় দাঁড়াব। কিন্তু আগ্রাসনের জন্য এটি ব্যবহার করা হবে না।’
রয়টার্সকে দেওয়া আলাদা সাক্ষাৎকারে আসিফ স্বীকার করেছেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক ক্ষমতাও এই চুক্তির আওতায় সৌদি আরবের জন্য ব্যবহারযোগ্য থাকবে। তার ভাষ্য, ‘আমাদের সক্ষমতাগুলো অবশ্যই এই চুক্তির আওতায় প্রযোজ্য হবে।’ পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তি আনুমানিক ১০০-১২০ ওয়ারহেড বলে ধারণা করা হয়।
সৌদি আরবের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এটি একটি সর্বাত্মক প্রতিরক্ষা চুক্তি, যেখানে সব ধরনের সামরিক সক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত। চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের রিয়াদ সফরের সময়। চুক্তির মূল ধারা অনুযায়ী, যেকোনো এক দেশের ওপর আক্রমণ মানেই উভয়ের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য হবে।
ভারত এই চুক্তি নিয়ে জানিয়েছে, এটি পাকিস্তান ও সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের সহযোগিতাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে, এবং তারা এর প্রভাব মূল্যায়ন করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি কার্যত সৌদি আরবের অর্থনৈতিক শক্তিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের সঙ্গে একীভূত করেছে। পাকিস্তান এতে শক্তিশালী আর্থিক সহায়তা এবং সম্ভাব্য ‘আরব জোট’-এর সুবিধা পেতে পারে। অন্যদিকে, সৌদি আরব পাবে একটি ‘পারমাণবিক ঢাল’, যা মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ইসরায়েল এবং ইরানকে সতর্ক রাখবে।
‘আরব জোট’ গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে খাজা আসিফ বলেন, ‘দরজা বন্ধ নয়। আগেভাগে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে এই অঞ্চলের দেশ ও জনগণের, বিশেষ করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর, নিজেদের একত্রে প্রতিরক্ষা করার অধিকার আছে।’
মন্তব্য করুন