রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে এক ফটোগ্রাফারকে ১৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন রাশিয়ার আদালত। সোভিয়েত যুগের বাঙ্কার সম্পর্কে এক মার্কিন সাংবাদিকের সঙ্গে তথ্য ভাগ করে নেওয়ার অভিযোগে গ্রিগোরি স্কভোরৎসভ নামের ওই রুশ ফটোগ্রাফারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) পশ্চিম রাশিয়ার পের্ম শহরের একটি আদালত এ রায় ঘোষণা করে। বিচারটি সম্পন্ন হয় বন্ধ কক্ষে। ফলে মামলার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ২০২৩ সালে গ্রেপ্তার হওয়া স্কভোরৎসভ শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন।
রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তার সাজা কার্যকর হবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার সংশোধনমূলক একটি কারাগারে। আদালতের রায়ের সময় কালো পোশাকে থাকা স্কভোরৎসভকে আদালতের কাচের খাঁচার ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, যার একটি ছবি রায়ের পর প্রকাশ পায়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নির্বাসিত রুশ আইনজীবীদের একটি গোষ্ঠী ‘পেরভি ওদেল’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্কভোরৎসভ দাবি করেন, তিনি যে তথ্য সরবরাহ করেছিলেন তা হয় অনলাইনে উন্মুক্ত ছিল, অথবা একটি রুশ লেখকের প্রকাশিত বই থেকে নেওয়া সম্ভব। বইটি সোভিয়েত আমলে পারমাণবিক হামলার আশঙ্কায় নির্মিত গোপন বাঙ্কার নিয়ে লেখা হয়েছিল। তবে যাকে তথ্য দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয় তিনি সেই মার্কিন সাংবাদিকের নাম প্রকাশ করেননি।
স্কভোরৎসভ মূলত স্থাপত্য বিষয়ক আলোকচিত্রে খ্যাতি অর্জন করেন এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রকাশ্য সমালোচক ছিলেন। তার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের সময় ফেডারেল নিরাপত্তা সংস্থার (এফএসবি) কর্মকর্তারা তাকে মারধর করেন এবং রাষ্ট্রদ্রোহ স্বীকারে চাপ দেন।
রায় ঘোষণার পর স্কভোরৎসভের পক্ষে একটি সহায়তা গোষ্ঠী টেলিগ্রামে জানায়, ‘কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটেনি।’ গোষ্ঠীটি জানায়, স্কভোরৎসভের মুক্তির একমাত্র সম্ভাবনা এখন রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য বন্দিবিনিময়।
মানবাধিকার সংস্থা ‘মেমোরিয়াল’ মনে করে, স্কভোরৎসভ রাজনৈতিক বন্দি। তার বিরুদ্ধে মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও আইন লঙ্ঘন করে পরিচালিত হয়েছে।
রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর রাষ্ট্রের গোপন তথ্যসংক্রান্ত আইন আরও কঠোর করে। এরপর থেকেই শিক্ষক, বিজ্ঞানী এবং সাংবাদিকসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলতি বছর আরও চারজন সাংবাদিককে ‘চরমপন্থার’ অভিযোগে ৫ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নিহত বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ক্রেমলিন বিরোধীকণ্ঠ দমন করার জন্য রুশ কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রদ্রোহ এবং গোপন তথ্য ফাঁসের মতো অভিযোগ ব্যবহার করছে।
মন্তব্য করুন