গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমেই চাপে পড়ছে ইসরায়েল। এবার তার প্রভাব পড়ল বৈশ্বিক পর্যটন খাতেও। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পর্যটন মেলা টিটিজি ট্রাভেল এক্সপেরিয়েন্স থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে দেশটিকে।
ইতালির রিমিনিতে আগামী ৮-১০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই মেলা। আয়োজক প্রতিষ্ঠান রিমিনি ফিয়েরা জানিয়েছে, চলমান পরিস্থিতিতে ইসরায়েল আর অংশগ্রহণের যোগ্যতা পূরণ করছে না। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রিমিনি শহর কর্তৃপক্ষ এবং এমিলিয়া-রোমাগনা আঞ্চলিক প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে।
টিটিজি ট্রাভেল এক্সপেরিয়েন্স কেবল একটি বাণিজ্যিক প্রদর্শনী নয়, বরং আন্তর্জাতিক পর্যটন শিল্পে ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। প্রতিবছর হাজারো ভ্রমণ এজেন্ট, এয়ারলাইন্স, হোটেল ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন এতে।
রিমিনির মেয়র জামিল সাদেগহলভাদ (ইরান বংশোদ্ভূত) এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘এবারের প্রদর্শনীতে ইসরায়েলের বুথ থাকবে না। নিরাপত্তা ঝুঁকি, হামলার আশঙ্কা, সম্ভাব্য বিক্ষোভ এবং গাজায় তেলআবিবের সামরিক অভিযানের কারণে ইতালিতে যে প্রবল উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই এই সিদ্ধান্ত।’
ইতালিতে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত আলন বার এই পদক্ষেপকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তার ভাষায়— ‘রিমিনির টিটিজি মেলা থেকে ইসরায়েলকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসলে রাজনৈতিক মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। গাজা ইস্যুকে নির্বাচনী প্রচারণার হাতিয়ার বানানো হচ্ছে। অথচ এতে গুরুতর প্রভাব পড়বে ইতালি-ইসরায়েলের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ব্যবসায়িক সম্পর্কে।’
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর লক্ষাধিক ইতালীয় নাগরিক কাজ, ধর্মীয় তীর্থযাত্রা বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ইসরায়েল যান। একইভাবে ইসরায়েল থেকেও বিপুলসংখ্যক মানুষ ইতালি সফর করেন। তার দাবি, এই সিদ্ধান্ত কেবল ঘৃণা উসকে দেবে এবং হামাসসহ সশস্ত্র গোষ্ঠীর কৌশলকে শক্তিশালী করবে।
ইসরাইলের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত ইতালির সরকার বা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। দেশটির পর্যটনমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য প্রকাশ্যে এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন। এমনকি ইতালির পর্যটন খাতের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইসরায়েলকে বিকল্প কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গাজা যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছে ইসরায়েল। নিয়মিতভাবে বিশ্বের বিভিন্ন পর্যটন ইভেন্টে অংশ নিলেও রিমিনির মতো বড় একটি বৈশ্বিক মেলা থেকে বাদ পড়া দেশটির জন্য কেবল অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিকভাবেও একটি বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র : ইয়েনেত নিউজ
মন্তব্য করুন