মধ্যপ্রাচ্যের একদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা, অন্যদিকে তেলআবিব—আর এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই রাশিয়া নিল এমন এক পদক্ষেপ, যা পুরো অঞ্চলের ভারসাম্য বদলে দিতে পারে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এক গোপন নথিতে উঠে এসেছে এক বিস্ফোরক তথ্য, ইরানকে ভয়ংকর সব অস্ত্র দিচ্ছে রাশিয়া, যা ইসরায়েলের কাছে কেবলই হুমকি নয়; বরং এক দুঃস্বপ্ন।
গত জুনে ইসরায়েলের আকস্মিক ও অযৌক্তিক হামলার দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছিল শক্তিশালী দেশ ইরান। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) নিজেদের তৈরি রাডার, জ্যামিং প্রযুক্তি ও অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট অস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের শত শত ড্রোন ধ্বংস করে দিয়েছিল। তবু যুদ্ধ শেষে ইরান বুঝে যায়, আধুনিক যুদ্ধবিমান ও উন্নত রাডার নেটওয়ার্ক ছাড়া আকাশের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা কঠিন। তাই শুরু হয় সেই প্রস্তুতি, আর সেই প্রস্তুতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রাশিয়া।
তবে এই দুই দেশের সম্পর্ক গভীর হয়েছিল ইউক্রেন যুদ্ধের সময়। যখন রাশিয়া ইরানের কামিকাজি ড্রোনে ভর করে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এর পরই পুতিন ও আয়াতুল্লাহ খামেনির সম্পর্ক উচ্চ মাত্রায় পৌঁছে।
সম্প্রতি রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোস্টেক করপোরেশনের কনসার্ন কোম্পানি রেডিও-ইলেকট্রনিক টেকনোলজিসের রপ্তানি তথ্য ফাঁস করেছে হ্যাকার গ্রুপ ব্ল্যাক মিরর। ফাঁস হওয়া তথ্যে ইরানকে গ্রাহক কোড ৩৬৪ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। নথি অনুযায়ী ৬ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের ৪৮টি সু-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির চুক্তি করেছে মস্কো। অর্থাৎ ইরান রাশিয়ার কাছ থেকে ৬ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছে। এই সু-৩৫ মূলত রাশিয়ার কিংবদন্তি সু-২৭ ‘ফ্ল্যাঙ্কার’-এর আধুনিক সংস্করণ। এটি একসঙ্গে অনেক কাজ করতে সক্ষম। এটি এমন একটি যুদ্ধবিমান, যা আকাশে আধিপত্য বিস্তার ও স্থল আক্রমণ, দুই ক্ষেত্রেই মারাত্মক কার্যকর।এই যুদ্ধবিমানে রয়েছে টার্বোফ্যান ইঞ্জিন, দুর্দান্ত গতিশীলতা প্রদান করে। ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে এসব অত্যাধুনিক ফাইটার জেট ইরানের হাতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
আরও চমৎকার ব্যাপার হলো, রাশিয়া শুধু রপ্তানিই নয়; বরং ইরানে তৈরি বা সংযোজন করতে প্রস্তাব দিয়েছে। ফাঁস হওয়া নথিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের শুরু থেকেই রাশিয়ার সুখোই ও কেআরইটির প্রকৌশলীরা ইরানে অবস্থান করছেন। সম্ভাব্য সংযোজন প্রকল্পের প্রস্তুতি তদারকিও করছেন তারা। এ ব্যবস্থায় ইরান ভবিষ্যতে ৪৮ থেকে ৭২টি ফাইটার জেট নিজ দেশে তৈরি করতে পারে, যা ১৯৭০-এর দশকের পর তাদের প্রথম আধুনিক ফাইটার উৎপাদন প্রকল্প হবে।
ইরানের বর্তমান যুদ্ধবিমান বহর যেখানে এখনো পুরোনো মার্কিন এফ-৪ ফ্যান্টম-২, এফ-৫ টাইগার-২ এবং অল্প সংখ্যক এফ-১৪ টমক্যাট-এর ওপর নির্ভরশীল, সেখানে এই সু-৩৫ আসলে এক নতুন যুগের সূচনা। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি ২০২৬ সালের মধ্যেই ইরান সু-৩৫ গ্রহণ শুরু করে তবে ২০২৭ সালের মধ্যে তারা পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াড্রন গঠন করতে পারবে, যা ইসরায়েলের জন্য হবে এক নতুন দুঃস্বপ্ন।
মন্তব্য করুন