অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর জন্য যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রস্তাব এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বিরোধী আইনপ্রণেতাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় পার্লামেন্টে পাস হয়েছে বিলটি। সোমবার রাতে পাস হওয়া এই বিলটিকে আইনে পরিণত করে এবার অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকার।
বিলটি পাস হওয়ার খবরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। আগামী ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যেই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে প্রথম বিমানটি রুয়ান্ডার উদ্দেশে যাত্রা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিলটি নিয়ে ভয় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে অবস্থানরত আশ্রয়প্রার্থীরা। এ বিষয়ে একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, রুয়ান্ডা বিল পাস হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে অবস্থানরত আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির ডার্বি শহরে অসংখ্য অভিবাসনপ্রত্যাশী বিলটি নিয়ে ভয় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ব্রিটিশ স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডার্বিতে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে চিঠি পেয়েছেন। এই চিঠিতে তাঁরা রুয়ান্ডায় অপসারণের ঝুঁকিতে আছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে, ছোট ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যারা অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করছেন তাদের মধ্য থেকে কিছুসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে। ২০২২ সালের এপ্রিলে এ বিষয়ে রুয়ান্ডার সঙ্গে যুক্তরাজ্য সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির আওতায় পাঁচ বছরে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জায়গা দেবে রুয়ান্ডা।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের গ্রহণ করার বিনিময়ে রুয়ান্ডাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সহায়তা দেবে ব্রিটিশ সরকার। পাশাপাশি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পুনর্বাসনের জন্য বাড়তি অর্থ পরিশোধেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
২০২২ সালের জুনে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে প্রথম ফ্লাইটটি রওনা করার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের এক আদেশে তা বাতিল হয়ে যায়। পরের বছরের নভেম্বরে ওই পরিকল্পনাকে অবৈধ ঘোষণা করে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টও। তবে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
অবশেষে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আবারও রুয়ান্ডা বিল উত্থাপন করা হলে এটি বিরোধী দলগুলোর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। পার্লামেন্টে এ নিয়ে অনেক দিন ধরে তর্ক-বিতর্কের পর সোমবার রাতে বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নেন।
তবে বিলটি সংসদে অনুমোদন পেলেও এটির বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে বিভিন্ন পক্ষ। ফলে নির্বাসন ফ্লাইটগুলো বিলম্বিত হতে পারে। অভিবাসনবিষয়ক আইনজীবীরা ইতিমধ্যেই এই বিলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবিক সংস্থাও এই বিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এবং ইউরোপ কাউন্সিল উভয়ই যুক্তরাজ্যকে তার পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ এই আইনটি মানবাধিকার সুরক্ষাকে ক্ষুণ্ন করে এবং বিশ্বব্যাপী অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন