ভারতের সঙ্গে সংঘাতের পর নিজেদের সামরিক বহর উন্নত করছে পাকিস্তান। দেশটি চীন থেকে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান পেতে যাচ্ছে। এ বিমান হাতে পেলে বিশ্বে হাতেগোনা কয়েকটি দেশের তালিকায় নিজেদের স্থান তুলে নিবে পাকিস্তান। যেখানে এ লক্ষ্য থেকে অন্তত এক দশক পিছিয়ে রয়েছে ভারত।
শুক্রবার (২০ জুন) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন পাকিস্তানকে পঞ্চম প্রজন্মের ৪০টি শেনইয়াং জে-৩৫স্টিলথ ফাইটার জেট সরবরাহ করতে যাচ্ছে। এই জে-৩৫ জেটের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান স্টিলথ প্রযুক্তি পরিচালনাকারী কয়েকটি দেশের মধ্যে যোগ দিচ্ছে। অন্যদিকে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে (আইএএফ) কোনো স্টিলথ ফাইটার বিমান সক্রিয় সেবায় নেই। তাদের দেশীয় পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ বিমান তথা অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এএমসিএ) অন্তর্ভুক্ত করতে এখনো অন্তত এক দশক সময় লাগবে। সরকারি অনুমান অনুযায়ী, এএমসিএ ২০৩৫ সালের আগে সক্রিয় হবে না। ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রবীণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানিয়েছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, আইএএফ ফাইটার পাইলট এবং প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক গ্রুপ ক্যাপ্টেন অজয় আহলাওয়াত (অবসরপ্রাপ্ত) পাকিস্তানি পাইলটদের চীনে প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের এই জেটগুলো পাওয়ার বিষয়টি মোটেও অবাক করার মতো নয়, কারণ তাদের মনোনীত ফাইটার পাইলটদের দল ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চীনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তারা এই ধরনের বিমানে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন পাকিস্তানকে যে সংস্করণটি দেবে তা হলো এফসি-৩১, যা জে-৩৫ এর তুলনায় কিছুটা কম ক্ষমতাসম্পন্ন। এটি বিশ্বব্যাপী প্রচলিত। কেউই পূর্ণ সংস্করণ দেয় না। এফসি-৩১ হলো জে-৩৫ এর রপ্তানি সংস্করণ এবং এটি পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি এয়ার ফোর্সের (প্ল্যানাফ) মূল বিমানের তুলনায় কিছুটা কম ক্ষমতাসম্পন্ন।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন আহলাওয়াত যোগ করেন, একমাত্র অবাক করার বিষয় হলো এগুলো নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কিছুটা আগেই আসছে। এটাই একমাত্র চমক।
ভারতীয় বিমান বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ, কৌশল এবং বৈচিত্র্যময় ইনভেন্টরির মাধ্যমে আকাশে আধিপত্য বজায় রেখেছে। জে-৩৫ সরবরাহ এই সুবিধাকে সংকুচিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এটি উদ্বেগজনক খবর। স্বাধীনতার পর থেকে আমরা পাকিস্তান, এমনকি চীনের উপর অন্তত প্রান্তিক সুবিধা ধরে রাখতে সংগ্রহের ক্ষেত্রে কঠিন লড়াই করেছি। পাকিস্তানি রঙে জে-৩৫ এর যেকোনো সংস্করণ আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে। এটি উদ্বেগজনক।
তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যবশত আমাদের কাছে শুধু দুটি খারাপ প্রযুক্তি রয়েছে। এগুলো হলো এফ-৩৫ এবং সু-৫৭। একমাত্র ভালো প্রযুক্তি হলো এএমসিএ। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো এটিকে জাতীয় মিশন-মোডে ঠেলে দেওয়া এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি চালু করা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর সহযোগিতায় ভারতের টুইন-ইঞ্জিন স্টিলথ ফাইটার প্রোগ্রাম এখনো উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এর প্রোটোটাইপ রোল-আউট ২০২৮-২৯ সালের মধ্যে লক্ষ্য করা হয়েছে। এছাড়া এর পূর্ণাঙ্গ অন্তর্ভুক্তি ২০৩৫ সালের আগে আসবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর এয়ার মার্শাল সঞ্জীব কাপুর (অবসরপ্রাপ্ত) এনডিটিভিকে বলেন, খবর অনুযায়ী, পাকিস্তানিরা এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০টি বিমান পেতে পারে। আমাদের এএমসিএ অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারি হিসেবে নয় থেকে দশ বছর সময় লাগবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আমাদের নিজস্ব দেশীয় প্ল্যাটফর্ম দরকার। কিন্তু একটি জাতি হিসেবে, আমরা কি আরও দশ বছর অপেক্ষা করতে পারি, যখন উভয় পক্ষের প্রতিপক্ষরা আরও এবং উন্নত সরঞ্জাম অর্জন করছে?
মন্তব্য করুন