কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নতুন সিরিয়ায় বিপদের মুখে কৃষক ও শিশুরা

সিরিয়ার এক শহরে রয়ে যাওয়া অবিস্ফোরিত ক্লাস্টার বোমা অপসারণের কাজ চলছে। ছবি : সংগৃহীত
সিরিয়ার এক শহরে রয়ে যাওয়া অবিস্ফোরিত ক্লাস্টার বোমা অপসারণের কাজ চলছে। ছবি : সংগৃহীত

সিরিয়ায় দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান হয়েছে। স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতন হয়েছে এবং দেশ নতুন স্বাধীনতার স্বাদ নিতে শুরু করেছে। কিন্তু, সিরিয়া এখন নতুন বিপদের মুখে রয়েছে। দীর্ঘ যুদ্ধকালীন সময়ের বিস্ফোরিত ও অবিস্ফোরিত বোমার কারণে দেশটির সাধারণ জনগণ এখনো অন্ধকার ভবিষ্যতের মুখোমুখি।

সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা অবিস্ফোরিত বোমা এখনো সেখানে বসবাসকারী জনগণের জন্য মারাত্মক হুমকি। বিশেষত কৃষকরা যারা মাঠে কাজ করেন এবং শিশুরা যারা খেলাধুলা করতে বের হয়, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ইউরোপ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন’ (এইচআই) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই বিপদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির ২৩ মিলিয়নের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

এইচআইর সিরিয়া কর্মসূচির পরিচালক দানিলা জিজি বলেন, এটি একটি চরম বিপর্যয়। এই দেশের দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষের মধ্যে দেড় কোটিই এখন এই ঝুঁকির মধ্যে আছেন। এর মানে, সিরিয়ার অধিকাংশ জনগণ এখনো গৃহযুদ্ধের পরবর্তী দুর্ভোগের শিকার, যেখানে বিস্ফোরিত বা অবিস্ফোরিত বোমা ছড়িয়ে আছে।

যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ : বোমা ও গোলাবারুদ

২০১১ সালে সিরিয়ার সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর গৃহযুদ্ধের অগ্নিপরীক্ষা চলে। পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু এবং লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুতির শিকার হওয়ার পর, এখনো বোমা ও গোলাবারুদ গৃহযুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ হিসেবে সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পড়ে আছে।

এইচআইর তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ চলাকালে সিরিয়ার ভূখণ্ডে প্রায় দশ লাখ গোলাবারুদ এবং বোমা ফেলা হয়েছে, যার মধ্যে এক থেকে তিন লাখ এখনো অবিস্ফোরিত অবস্থায় রয়েছে।

সিরিয়ায় থাকা বোমাগুলোর মধ্যে অনেকগুলো ব্যারেল বোমা, যা আসাদ সরকার হেলিকপ্টার থেকে ফেলে। এই বোমাগুলোর বিস্ফোরণের হার তুলনামূলকভাবে কম, যার ফলে অনেক বোমা এখনো অবিস্ফোরিত অবস্থায় রয়ে গেছে। এমনকি ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর পতনের পরও সিরিয়ায় প্রচুর বিস্ফোরক এবং বোমা রেখে গেছে, যেগুলো এখনো অপসারিত হয়নি।

ফিরে আসা শরণার্থীদের জন্য বিপদ বাশার আল-আসাদের পতনের পর অনেক সিরীয় শরণার্থী তাদের দেশে ফিরে আসছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ১০ লাখেরও বেশি সিরীয় ইতোমধ্যে তাদের পুরনো বাড়িতে ফিরে এসেছেন, যার মধ্যে দুই লাখ ৮০ হাজার বিদেশ থেকে ফিরেছেন।

তবে, তাদের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপদ অপেক্ষা করছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, বলে মন্তব্য করেছে এইচআই। এর মানে, ফেরত আসা এই জনগণের জন্য অবিস্ফোরিত বোমা এবং গোলাবারুদ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গেছে।

বিপদে কৃষক ও শিশুরা এ বছর জানুয়ারিতে ১২৫টি অবিস্ফোরিত বোমা বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে, যার ফলে অন্তত ৮৫ জন নিহত এবং ১৫২ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কৃষক এবং শিশুরা। কৃষকরা তাদের জমিতে কাজ করার সময় এবং শিশুরা খেলার জন্য বাইরে যাওয়ার সময় এই বোমার শিকার হচ্ছেন।

যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত গোলাবারুদ এখনো তাদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে রেখেছে। সিরিয়ার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের পথে এক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই অবিস্ফোরিত বোমাগুলো।

এখন দেখতে হবে, কীভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করতে পারে এবং এই বিপদের মধ্যে থাকা জনগণের জীবন বাঁচাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিশ্বকাপজয়ী বিধ্বংসী ব্যাটারকে দলে ভেড়াল রংপুর

শাহ আমানত বিমানবন্দরে ৯০ লাখ টাকার সিগারেট জব্দ

বাতের ব্যথার ধরন, উপসর্গ ও যত্ন জানালেন বিশেষজ্ঞ

ইসরায়েলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান মিসর ও কাতারসহ ৮ মুসলিম দেশের

আপনার জিমেইল হ্যাকড হয়েছে কিনা যাচাই করুন এখনই

কর্মসূচি স্থগিত, বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা প্রাথমিক শিক্ষকদের

নতুন কোচ নিয়োগ দিল ঢাকা ক্যাপিটালস

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বিদেশ নিতে দেরি হচ্ছে : ডা. জাহিদ

খালেদা জিয়াকে নিয়ে গুজব না ছড়ানোর আহ্বান ডা. জাহিদের

অপু-সজলের ‘দুর্বার’

১০

বাংলাদেশে আমরা ভিন্নমতকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই : উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

১১

শেখ হাসিনাকে ভারতে থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে: জয়শঙ্কর

১২

ঢাকাবাসী জাপান ওয়ার্ল্ডের উদ্যোগে রাজধানীতে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা

১৩

খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে ডা. জুবাইদা

১৪

মেঘনা ব্যাংকের এমডি হলেন সৈয়দ মিজানুর রহমান 

১৫

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে প্রথম জাতীয় আইন সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১৬

বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিল

১৭

নদীতে ডুবে প্রাণ গেল ২ ভাইয়ের

১৮

নবম পে স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত

১৯

শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, অভিযুক্তকে যে শাস্তি দিল এলাকাবাসী

২০
X