মাদ্রাসা টিকে আছে বলেই আমাদের ওপর বিভিন্ন ঝড় ঝাপটা আসে। এ ধরনের মাদ্রাসা টিকিয়ে রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যায় যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় জাফরীয়া জীবন্ত কোরআন বহুমুখী আদর্শ মাদ্রাসা পরিদর্শনে তিনি কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, মাদ্রাসাগুলো আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। কারণ এ সমস্ত মাদ্রাসা টিকে আছে বলেই দ্বীন ধর্ম মূল্যবোধ সাংস্কৃতি আমাদের মাঝে টিকে আছে। এজন্যে আমাদের ওপর বিভিন্ন ঝড় ঝাপটা আসে। আধুনিকতা আমাদের এলোমেলো করে দেয়।
তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলি, আমরা যদি কেউ ডাক্তার হতে চাই তাহলে আমাকে মেডিকেল কলেজে পড়তে হবে। আমি যদি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই তাহলে আমাকে বুয়েট-কুয়েত-রুয়েট-চুয়েটে পড়তে হবে। আমি যদি কৃষিবিদ হতে চাই তাহলে আমাকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অথবা সেরা বাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে হবে। আমি যদি আলেম হতে চাই তাহলে মাদ্রাসায় পড়ব।
ড. খালিদ হোসেন বলেন, মাদ্রাসা হচ্ছে স্পেশালাইজড এডুকেশন অন হলি কুরআন অন্ড দি সুন্নাহ অব প্রফেট মুহাম্মদ (সা.)। আমাদের মাঝে আধুনিকতার ছোঁয়া এত বেশি করে লেগেছে যে মাদ্রাসায় পড়েও ছাত্ররা আর টুপি মাথায় দিতে চাই না। কোর্তা গায়ে দিতে চায় না, গায়ে দিতে চায় না।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কাউকে শুনলে বলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। কিন্তু এটা বলে না যে দাখিল অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। আলিম পাশ করে ফাযিল ভর্তি হলেও বলে অনার্সে পড়ি। এরপর কোন ইউনিভার্সিটি শুনলে তখন বলে এরাবিক ইউনিভার্সিটি। এগুলো হচ্ছে হীনমন্যতা। এটি থাকলে আমরা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারব না।
তিনি মাদ্রাসাছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, ছাত্রদের আরবি শিখান। মাদ্রাসাছাত্ররা বেশিরভাগ আরবি জানে না। দুর্বল। যারা জানে তাদের প্রতি আমার সম্মান শ্রদ্ধা স্যালুট। আরবি প্রতি আমাদের অনীহা তৈরি হয়ে গেছে।
তিনি হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তোমরা আরবি শিখ। আরবি তোমার ধর্ম। আরবি শিখান। ঢাকা থেকে, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষক নিয়ে আসেন। খুব ভালো আরবি জানে এমন লোকদের দিয়ে আরবি শিখানো প্রয়োজন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আপনি যদি আরবি এবং ইংরেজি জানেন তাহলে আপনার বেতন হবে ডলারে। দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডে হাদিস পড়ানো হয় আরবিতে। হেদায়াহ পড়ানো হয় ইংরেজিতে। আপনি যদি ভালো আরবি-ইংরেজি জানেন তাহলে আপনার দাম অনেক বেশি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক ধর্মমন্ত্রী ও পানিসম্পদ এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এনামুল হক, যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলামসহ অন্যরা।
উল্লেখ্য, জাফরীয়া জীবন্ত কোরআন বহুমুখী আদর্শ মাদ্রাসা ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটির ক্যাম্পাস যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দত্তরাস্তা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। প্রতিষ্ঠানটিতে থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ মদিনা, তুরস্ক ও ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করছে। ছয় বছরে অর্থসহ হাফেজে কোরআন ও দাখিল পাসের লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে।
মন্তব্য করুন