কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫৮ পিএম
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বেঁচে থাকার লড়াইয়ে কচ্ছপ খাচ্ছে গাজাবাসী

গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলের একতরফা স্থল ও বিমান হামলা শুরুর পর ত্রাণ প্রবেশ কার্যত বন্ধ হয়ে যায় গাজা উপত্যকায়। ছবি : সংগৃহীত
গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলের একতরফা স্থল ও বিমান হামলা শুরুর পর ত্রাণ প্রবেশ কার্যত বন্ধ হয়ে যায় গাজা উপত্যকায়। ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ খাদ্যসংকটের কারণে অনেক ফিলিস্তিনি বাসিন্দা এখন বেঁচে থাকার তাগিদে সামুদ্রিক কচ্ছপের মাংস খাচ্ছে।

বিশেষ করে গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলের একতরফা স্থল ও বিমান হামলা শুরুর পর ত্রাণ প্রবেশ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে উপত্যকাবাসী।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) প্রকাশিত আরব নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, খাবার না পেয়ে অনেক পরিবার এখন বিকল্প প্রোটিনের উৎস হিসেবে সামুদ্রিক কচ্ছপ রান্না করে খাচ্ছেন। এদের কেউ কেউ আগে কখনো কচ্ছপ দেখেননি, এমনকি ভয় পেতেন—তবুও ক্ষুধার তীব্রতায় বাধ্য হয়ে তারা এই নিষিদ্ধ প্রাণীকেও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করছেন।

গাজাবাসী মাজিদা কানান, যিনি এখন খান ইউনিস শহরের একটি তাঁবুতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন, রান্নার হাঁড়িতে কচ্ছপের মাংস ফোটাতে ফোটাতে বলেন, বাচ্চারা কচ্ছপকে ভয় পেত। তাই আমরা বলেছিলাম, এটা বাছুরের মাংসের মতোই সুস্বাদু। কেউ কেউ খেয়েছে, কেউ খায়নি।

৬১ বছর বয়সী মাজিদা বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটাই তৃতীয়বার তিনি কচ্ছপ রান্না করছেন। বাজারে কিছুই নেই, বিশেষ করে মাংস তো নেই-ই। তিনি বলেন, দুই ব্যাগ ছোট সবজি কিনতেও ৮০ শেকেল (২২ ডলার) খরচ করতে হয়।

সাধারণত কচ্ছপের খোলস ছাড়ানোর পর, মাংস কেটে সেদ্ধ করে তা পেঁয়াজ, টমেটো, গোলমরিচ ও বিভিন্ন মসলা দিয়ে রান্না করা হয়। তবে এই প্রাণী আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষিত ও বিপন্ন হিসেবে পরিচিত। তবুও গাজার উপকূলে জেলেদের জালে ধরা পড়লে এসব কচ্ছপকেই বর্তমানে খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এক জেলে, আবদেল হালিম কানান বলেন, আমরা কখনই কচ্ছপ খাওয়ার কথা ভাবিনি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর খাবারের এতই সংকট হয়েছে যে আমাদের কোনো উপায় নেই। আমরা ইসলামী নিয়ম মেনেই কচ্ছপ জবাই করছি। যদি দুর্ভিক্ষ না হতো, তাহলে কচ্ছপ ছেড়ে দিতাম। তবে এখন আমাদের প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে।

বর্তমানে গাজা উপত্যকায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করেছে, এখানে দুর্ভিক্ষ এখন কেবল সম্ভাবনা নয়, বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।

ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ, বাজারে পণ্যশূন্যতা এবং ক্রমবর্ধমান দামে সাধারণ মানুষ খাবার পাচ্ছেন না। এরই মধ্যে কেউ কেউ পশুখাদ্য, ঘাস, এমনকি পচা পানি পান করতেও বাধ্য হচ্ছেন।

এই অবস্থায় কচ্ছপের মতো একটি বিপন্ন প্রজাতি হয়ে উঠেছে গাজাবাসীর শেষ আশার উৎস—একটি প্রোটিনের বিকল্প, যা তারা কখনো ভাবেননি যে একদিন খেতে হবে। ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে, জীবনধারণের এই ত্যাগ-তিতিক্ষার দৃশ্য এখন গাজার প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিসেম্বরের ৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলার 

সালমান এফ রহমানসহ ৬ জনের ‎বিরুদ্ধে পৃথক তিন মামলা

ডা. আসিবুলের বেতন বন্ধের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না : আদালত

আইজিপির অপসারণ ও বিচার চাইলেন পিন্টুর স্ত্রী

নিবন্ধনহীন নারী রাষ্ট্রের চোখে অদৃশ্য : নারীর অধিকার সুরক্ষায় শতভাগ নিবন্ধন জরুরি

চট্টগ্রামে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বাড়িতে ব্যারিস্টার মীর হেলাল

কালবেলার অনুসন্ধানে ধরা হানিট্র্যাপ চক্র, আটক ২

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ নেতাকে শোকজ

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ব্যর্থ অন্তর্বর্তী সরকার : টিআইবি

‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে’

১০

আরএমপির ১২ থানায় ওসি পদে রদবদল

১১

রাবির দ্বাদশ সমাবর্তন নিয়ে অসন্তোষ

১২

খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য আইইবিতে দোয়া মাহফিল

১৩

৩২ হাজার সহকারী শিক্ষককে দুঃসংবাদ দিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

১৪

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সোমবার

১৫

যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা নিয়ে ‘সুখবর’ দিলেন সারাহ কুক

১৬

২০২৬ বিশ্বকাপে মেসিদের কত কিলোমিটার ভ্রমণ করতে হবে?

১৭

খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়া নিয়ে নতুন ভাবনা মেডিকেল বোর্ডের

১৮

নওগাঁ জেলা পরিষদ পার্কের অধিকাংশ রাইডস ব্যবহারের অনুপযোগী

১৯

এক সপ্তাহে ১১ হাজারের বেশি প্রবাসীকে ফেরত পাঠাল সৌদি

২০
X