দখলদার ইসরায়েলের হামলা চলাকালীন ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসবে না বলে জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। খবর বিবিসির।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় শুক্রবার (২০ জুন) আলোচনায় মিলিত হয়েছিলেন ইরান ও ইউরোপের একাধিক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বৈঠক শেষে ইরান জানায়, দখলদারদের হামলা চলমান থাকা অবস্থায় তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করবে না। পাশাপাশি, যেকোনো আলোচনায় বসার আগে ‘জঘন্য’ হামলার দায়ে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বিচারের আওতায় আনতে হবে বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেয় তেহরান।
আব্বাস আরাগচি বলেন, ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ হলে এবং ইরানে যে জঘন্য হামলা চালানো হয়েছে, তার জন্য আগ্রাসনকারীদের বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে ইরান আবারও কূটনৈতিক সমাধানের পথ বিবেচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। এসব কর্মসূচির ওপর হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইরান তার আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ইরাক জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরাকের প্রতিনিধি জানান, নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের ঠিক আগে ইসরায়েলের ৫০টি যুদ্ধবিমান ইরাকের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করে।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরাকের জাতিসংঘ মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আব্বাস কাযম ওবায়েদ আল-ফাতলাওয়ি এই ঘটনাকে ইরাকের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেন।
আল-ফাতলাওয়ি বলেন, যুদ্ধবিমানগুলো সিরিয়া-জর্ডান সীমান্ত এলাকা থেকে ইরাকের আকাশসীমায় প্রবেশ করে। প্রথম দফায় ২০টি যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশ করে, এরপর আরও ৩০টি যুদ্ধবিমান ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে এগিয়ে যায়। এসব যুদ্ধবিমান বসরা, নাজাফ ও কারবালা শহরের আকাশসীমা অতিক্রম করেছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের আকাশসীমা লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পবিত্র স্থান ও অঞ্চলগুলোর ওপর এমন হুমকি আমাদের জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, কারণ এসব ধর্মীয় স্থান আমাদের জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গুপ্তহত্যার চেষ্টা করেছে ইরান-এমন অভিযোগ তুলেছে ইসরায়েল। শুক্রবার (২০ জুন) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বিশেষ অধিবেশনে এই অভিযোগ তোলেন ইসরায়েলের জাতিসংঘে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি।
বিশেষ অধিবেশনে ইসরায়েলি দূত বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বহুবার প্রকাশ্যে ইসরায়েল ধ্বংসের আহ্বান জানিয়েছেন, যা কেবল রাজনৈতিক ভাষ্য নয়- বরং সে অনুযায়ী বাস্তব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টাও চালানো হয়েছে। ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে হত্যার প্রচেষ্টা সেই প্রমাণ।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইরানের রাষ্ট্রীয় সমর্থনে পরিচালিত গোষ্ঠীগুলো শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলি নাগরিকদের লক্ষ্য করে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং নতুন হামলার পরিকল্পনাও করছে। তার ভাষায়, ইরান এখন বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের প্রধান অর্থদাতা ও সংগঠক।
জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আর কতদিন এই ইরানি প্রহসন সহ্য করা হবে? এখনই সময় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার।
ইসরায়েলি প্রতিনিধি এই অভিযোগের পেছনে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেশ না করলেও, বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার একটি কূটনৈতিক পরিণতি।
অনেকেই মনে করছেন, এই বক্তব্যের মাধ্যমে ইসরায়েল একটি নতুন আন্তর্জাতিক ন্যারেটিভ গড়ে তুলতে চাইছে, যার মাধ্যমে তারা ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ও কূটনৈতিক চাপ আরও বাড়াতে চায়।
মন্তব্য করুন