ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার জবাবে এবার কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ছয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তেহরান। রয়টার্স, অ্যাক্সিওস ও বিবিসি অ্যারাবিকের প্রকাশিত পৃথক প্রতিবেদনে এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সোমবার (২৩ জুন) স্থানীয় সময় বিকালে এই হামলা হয়। ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এই প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে।
হামলার আগে থেকেই ঘাঁটিটির প্রতি হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে জানান এক পশ্চিমা কূটনীতিক। হামলার পর কাতার সরকার আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস কাতারে অবস্থানরত আমেরিকানদের ঘরের ভেতর অবস্থান করতে নির্দেশ দেয়।
আল উদেইদ বিমানঘাঁটি কাতারের রাজধানী দোহার উপকণ্ঠে অবস্থিত। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) বিমান অভিযানের সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই ঘাঁটি শুধু কাতারের জন্য নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
বর্তমানে এখানে প্রায় ৮ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। সময়কালভেদে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী সদস্যরাও এই ঘাঁটিতে অবস্থান করে। কখনো কখনো এটি আবু নাখলা এয়ারপোর্ট নামেও পরিচিত।
আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে উপসাগরীয় অঞ্চলের দীর্ঘতম রানওয়ে রয়েছে, যা বড় ও ভারী সামরিক বিমান পরিচালনায় সুবিধা দেয়। এটি ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানের সময় গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ কেন্দ্র ও লজিস্টিক বেইস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এখনো যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক কৌশলে তা অগ্রগণ্য।
২০০০ সালে কাতার সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে ঘাঁটি ব্যবহারের প্রবেশাধিকার দেয়। এরপর ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ঘাঁটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয় এবং ২০০২ সালের ডিসেম্বরে দোহা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
লন্ডনভিত্তিক গোয়েন্দা সংস্থা গ্রে ডাইনামিক্স জানায়, ওই চুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি স্বীকৃতি পায়।
২০২৪ সালে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কাতারের সঙ্গে আরও ১০ বছরের জন্য আল উদেইদে তাদের সামরিক উপস্থিতি ধরে রাখার নতুন চুক্তি করেছে। এর ফলে ঘাঁটিটির কৌশলগত গুরুত্ব শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতেও বড় ভূমিকা রাখবে।
আল উদেইদ ঘাঁটি এখন শুধু একটি সামরিক ঘাঁটি নয়- এটি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তৎপরতা, নজরদারি, লজিস্টিকস এবং আঞ্চলিক সামরিক কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু। ইরানের এই হামলা এই ঘাঁটির কৌশলগত গুরুত্বকে নতুনভাবে সামনে এনেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আল উদেইদ ঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ, প্রতিরোধ ও কূটনীতির জটিল সমীকরণে একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
মন্তব্য করুন