কাতারের রাজধানী দোহার উপকণ্ঠে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘আল উদেইদ’ বিমানঘাঁটিতে সোমবার (২৩ জুন) স্থানীয় সময় বিকেলে ছয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলার জবাবে এ আক্রমণ চালানো হয়েছে বলে জানায় তেহরান। ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে দোহা শহর।
হামলার পরপরই এই আঞ্চলিক উত্তেজনার বিষয়ে উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ- সৌদি আরব, জর্ডান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লেবানন ও ফিলিস্তিন।
সৌদি আরব
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে কাতারে ইরানের হামলাকে ‘অযৌক্তিক ও কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা এটিকে আন্তর্জাতিক আইন ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি সদ্ভাবের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে। রিয়াদ কাতারের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় দেশটির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং প্রয়োজনে যেকোনো প্রতিরক্ষা পদক্ষেপে কাতারকে সমর্থন দেওয়ার অঙ্গীকার করে।
জর্ডান
জর্ডান এই হামলাকে কাতারের সার্বভৌমত্ব এবং জাতিসংঘ সনদের সরাসরি লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. সুফিয়ান আল-কুদাহ বলেন, এই ধরনের উত্তেজনা পুরো অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তিনি আরও বলেন, এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে অবিলম্বে সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করে আলোচনায় ফিরে আসতে হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)
ইউএই এই হামলাকে কাতারের আকাশসীমা ও সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা কাতারের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে যেকোনো আঘাত দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি। ইউএই কাতারের জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় গৃহীত সব পদক্ষেপকে পূর্ণ সমর্থন জানায়।
বাহরাইন
বাহরাইনও ইরানের এই হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা এটিকে কাতারের আকাশসীমা ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, এই সংবেদনশীল সময়ে বাহরাইন কাতারের সঙ্গে পুরোপুরি সংহতি প্রকাশ করছে এবং দেশটির সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পাশে থাকবে।
লেবানন
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন কাতারে এই হামলাকে ‘ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এই ধরনের আক্রমণ চলমান আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং সংঘর্ষ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি করে। তিনি কাতারের গঠনমূলক ভূমিকার প্রশংসা করে দেশটির প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেন।
ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিন সরকার এই হামলাকে ‘ভ্রাতৃপ্রতিম কাতারের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবে অভিহিত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা কাতারের সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও একাত্মতা প্রকাশ করে এবং আঞ্চলিক শান্তির জন্য কূটনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানায়।
ইরানের এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন উত্তেজনার সূচনা করেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট যে, এই আক্রমণ কেবল কাতার নয়, বরং গোটা উপসাগরীয় নিরাপত্তা কাঠামোকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বড় ধরনের কূটনৈতিক উত্তেজনা ও সামরিক অস্থিরতার আশঙ্কা বাড়ছে।
মন্তব্য করুন