গাজা যেন এক মৃত্যুপুরীর নাম। এখানে দুর্ভিক্ষ প্রতিদিনের বাস্তবতা। শিশুরা ঘুম থেকে উঠে রুটি চায়, যা তাদের বাসায় থাকে না। একজন মা তার সন্তানকে বোঝাতে পারেন না কেন রুটি নেই। আর পুরো দুনিয়া কেন এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে চুপ করে আছে। এখানে খাবার চাইতে গেলে মরতে হয়, গুলি কিংবা বুলেটে। পুরো উপত্যকা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল।
এই অবস্থায় গাজাবাসীর জন্য বোতলে করে সাগরে খাদ্য ভাসাচ্ছেন মিসরের সাধারণ মানুষ। একজন মিসরীয়কে সাগরে খাদ্য ভাসানোর সময় গাজাবাসীর উদ্দেশ্যে বলতে শুনা যায়- ‘প্রিয় গাজাবাসী ভাইয়েরা, আমাদের ক্ষমা করো, আমরা তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না।
মিশরের সাধারণ মানুষ বোতলে করে সাগরে খাদ্য ভাসিয়ে দিচ্ছে, যেন আল্লাহর ইচ্ছায় সাগরের ঢেউ এই খাবার গাজাবাসীর কাছে পৌঁছে দেয়। প্রশ্ন হলো এই চিন্তা মিসরের মানুষের মাথায় কোথা থেকে এলো।
উত্তর হলো- এরকম একটি চমৎকার ঘটনা ঘটেছিল ‘বনি ইসরায়েলের’ সময়ে। রাসুল ﷺ সেই ঘটনা নিজে সাহাবায়ে কেরামকে শুনিয়েছিলেন। আবু হুরায়রা (রা.) হতে থেকে বর্ণিত। রাসুল ﷺ বলেছেন, বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি অন্য আরেক ব্যক্তির কাছে এক হাজার দিনার ঋণ চেয়েছিলেন। তখন ঋণদাতা বললেন, কয়েকজন সাক্ষী আনো। আমি তাদের সাক্ষী রাখরো। উত্তরে ঋণগ্রহিতা বললেন, সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
তখন ঋণদাতা বললেন, তা হলে একজন জামিনদার উপস্থিত করো। ঋণগ্রহীতা আবারো বললেন, জামিনদার হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। এরপর ঋণদাতা নির্ধারিত সময়ে ওই ব্যক্তিকে এক হাজার দিনার ঋণ দিয়ে দেন।
এই দীনার নিয়ে ঋণ গ্রহীতা সামুদ্র সফরে বের হন এবং তার প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার জন্য যানবাহন খুঁজতে লাগলেন। যাতে তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণদাতার কাছে এসে পৌঁছতে পারেন। কিন্তু তিনি কোনো যানবাহন পেলেন না।
এরপর ঋণগ্রহীতা এক টুকরো কাঠ নিয়ে তা ছিদ্র করেন এবং ঋণদাতার নামে একখানা পত্র ও এক হাজার দীনার এই বাক্সে ভরে ছিদ্রটি বন্ধ করে সমুদ্রে ছেড়ে দিয়ে বলেন- হে আল্লাহ! আপনি তো জানেন আমি অমুকের কাছ থেকে এক হাজার দিনার ঋণ এনেছিলাম। আমি বলেছিলাম, সাক্ষী এবং জামিনদার হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। আমি তার ঋণ যথা সময়ে পরিশোধ করতে যানবাহনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। তাই আমি তোমার নিকট সোপর্দ করলাম, এই বলে ঋণগ্রগীতা কাটের বাক্স সমুদ্রে নিক্ষেপ করেন।
এরপর তিনি শহরে ফিরে যান এবং আবারো যানবাহন খুঁজতে লাগেন।এদিকে ঋণদাতা এই আশায় সমুদ্রতীরে যান, ঋণগ্রহীতা কোনো নৌযানে করে আসছেন কি না। সমুদ্র তীরে যাওয়ার পর ঋণদাতা একটি কাটের বাক্স দেখতে পান। তিনি তার পরিবারের জ্বালানির জন্য এটি বাড়ি নিয়ে আসেন। ঋণদাতা বাড়িতে এনে এই কাট চিরার পর একটি পত্র ও এক হাজার দিনার দেখতে পান।
এর কিছু দিন পর ঋণগ্রহীতা এক হাজার দিনার নিয়ে এসে ঋণদাতার বাড়িতে হাজির হন এবং বলেন- আল্লাহর কসম! আমি আপনার দিনার যথাসময়ে পৌঁছিয়ে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি কোনো নৌযান পাইনি।
ঋণদাতা বললেন, তুমি কী আমার নিকট কিছু পাঠিয়েছিলে? ঋণগ্রহীতা বললেন, আমি আসার জন্য কোনো যানবাহন পাইনি। তখন ঋণদাতা বললেন, তুমি কাঠের টুকরোর ভেতরে যা পাঠিয়েছিলে, তা আল্লাহ তোমার পক্ষ থেকে আমাকে আদায় করে দিয়েছেন। তখন ঋণগ্রহীতা আনন্দচিত্তে এক হাজার দিনার নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।
নেটিজেনরা বলছেন- বনি ইসরায়েলের ওই ঘটনা মিসরের এই মানুষগুলোকে সাগরে খাদ্য ভাসিয়ে গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াতে হয়তো অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
মন্তব্য করুন