ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর এলাকায় ‘বর্ণবৈষম্য’ বিস্তারে ইসরায়েল কাজ করছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান তামির পার্দো। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) বার্তাসংস্থা এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন স্বীকারোক্তি দেন।
তামির পার্দো মোসাদের সবশেষ সিনিয়র কর্মকতা ছিলেন। তিনি ফিলিস্তিনে ইসরায়েলে ‘বর্ণবৈষম্য’ বিস্তারের বিসয়টি প্রকাশে স্বীকার করে নিলেন। তিনি জানান, ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ড সমর্থনের জন্য অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের একটি তালিকাও প্রণয়ন করা হয়েছে। পার্দো ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোসাদের প্রধান ছিলেন। তার সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বিদ্বেষমূলক আচরণের বিষয়টি সামনে এনে তিনি বিষয়টি পরিষ্কার করেন।
এপির ওই সাক্ষাৎকারে পার্দো বলেন, এখানেও (ইসরায়েলে) একটি বর্ণবাদী তথা জাতিবিদ্বেষী রাষ্ট্র রয়েছে। এই অঞ্চলে দুজন মানুষকে দুটি পৃথক আইন দিয়ে বিচার করা হয়। এমনটা কেবল একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্রেই হতে পারে।
২০১১ থেকে ২০১৬ সালে তিনি যখন মোসাদের প্রধান ছিলেন, তখনও এই একই অবস্থা ছিল কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে পার্দো বলেন, আমি বিশ্বাস করতাম যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতেন। তবে তার চেয়ে বর্ণবৈষম্যের এ বিষয়টি আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তিনি জানান, মোসাদের প্রধান থাকাকালে নেতানিয়াহুকে ইসরায়েলের সীমান্ত নির্ধারণের বিষয়ে বারবার সতর্ক করেন। এটি না হলে ইহুদিদের এ রাষ্ট্রটি হুমকিতে পড়বে। তার ভাষায়, ‘আমি বলেছিলাম, ‘ইসরায়েলকে নির্ধারণ করতে হবে সে কি চায়। সে কি এমন একটি দেশ হয়ে থাকতে চায়, যার কোনো নির্দিষ্ট সীমান্ত বা সীমারেখা নেই?’
মোসাদের সাবেক এ প্রধানের এমন স্বীকারোক্তির পর বিষয়টি নিয়ে চটেছে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি। দলটি বলেছে, এমন মন্তব্যের জন্য পার্দোর লজ্জা হওয়া উচিত। তিনি ইসরায়েল এবং ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনীকে রক্ষার বদলে অপমানিত করেছেন।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলে ক্রমেই তামির পার্দোর মতো মানবাধিকার নিয়ে কথা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে।এ সংখ্যা তেমন উল্লেখযোগ্য না হলেও তাদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার নিয়ে আরও বেশি জোরালো আওয়াজ তুলছে। দেশটির অন্যান্য অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চেয়ে পার্দোর পদমযায়দার কারণে তার এ বক্তব্যের গুরুত্ব অনেক বেশি। এর ফলে বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েলি প্রশাসনও নড়েচেড়ে বসতে পারে।
মন্তব্য করুন