অভ্যুত্থানের পর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে সিরিয়া। দেশটিতে গত বছরের শেষের দিকে বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে পালিয়ে যান সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। এর ফলে তার দীর্ঘকালের শাসনের অবসান ঘটে। এরই মধ্যে শুরু হচ্ছে নির্বাচনের প্রস্তুতি।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় আগামী ৫ অক্টোবর নতুন পার্লামেন্ট (গণপরিষদ নির্বাচন People’s Assembly) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটি বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর দেশিটিতে প্রথম জাতীয় নির্বাচন। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা (সানা) জানিয়েছে, নির্বাচনটি ‘সব নির্বাচনী জেলায়’ অনুষ্ঠিত হবে। নতুন সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বৈধতা অর্জনের লক্ষ্যে এই নির্বাচন আয়োজন করছে।
আলজাজিরা জানিয়েছে, ২১০ আসনের পার্লামেন্টে এক-তৃতীয়াংশ সদস্য সরাসরি নিয়োগ দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। বাকি সদস্যরা নির্বাচিত হবেন স্থানীয় কমিটির মাধ্যমে, যা নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে কাজ করবে।
সানা জানিয়েছে, পার্লামেন্ট নতুন আইন, বিদেশি চুক্তি অনুমোদন এবং দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি সংস্কারের ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া, এটি একটি ‘বিস্তৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভিত্তি গড়ে তুলবে’। তবে সমালোচকরা বলছেন, বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা সিরিয়ার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলোর যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করছে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে প্রথমে সেপ্টেম্বর মাসে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ওই সময়ে নিরাপত্তাজনিত কারণে সুয়াইদা, হাসাকা ও রাক্কা প্রদেশে ভোট স্থগিত করা হতে পারে বলে জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে সুয়াইদায় জুলাই মাসে দ্রুজ যোদ্ধা ও সুন্নি বেদুইন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে, অন্যদিকে হাসাকা ও রাক্কা এখনো আংশিকভাবে কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
চলতি বছরের মার্চে প্রেসিডেন্ট আল-শারা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সাংবিধানিক ঘোষণা জারি করেন, যেখানে ইসলামি আইনকে কেন্দ্রীয় ভূমিকা দেওয়া হয়েছে এবং নারীর অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে বিরোধীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এই কাঠামো সরকারের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা ন্যস্ত করছে।
আল-শারা এক সময় আল-কায়েদার কমান্ডার ছিলেন এবং হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে আল-আসাদ পতনে ভূমিকা রাখেন। বর্তমানে তিনি আঞ্চলিক কূটনীতি ও নিরাপত্তা আলোচনার মাধ্যমে সরকারকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় এক মিডিয়াকে তিনি বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা আলোচনা ‘অবশ্যক’, তবে কোনো চুক্তিই সিরিয়ার ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষা না করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
মন্তব্য করুন