ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির এ হামলায় একই পরিবারের ২৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া হামলায় আরও অনেকে ধ্বংস্তূপের নিচে আটকা রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা সিটির সাবরা এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় সময় ভোর রাতে সাবরা পাড়ায় একাধিক বাড়িতে বোমা বর্ষণ করে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। এলাকাটিতে গত আগস্টের শেষ দিকে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।
আলজাজিরা জানিয়েছে, হামলার পর অন্তত ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়রা এবং উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, এখনো প্রায় ৫০ জন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা এখনো ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে জীবিত স্বজনদের চিৎকার শুনতে পাচ্ছেন।
একজন শোকাহত স্বজন বলেন, আমি সারা পৃথিবীর কাছে আবেদন করছি: আমাদের সাহায্য করুন। আমাদের প্রিয়জনরা জীবিত অবস্থায় মাটির নিচে চাপা পড়ে আছেন। আমরা তাদের চিৎকার শুনতে পাচ্ছি, কিন্তু পৌঁছাতে পারছি না।
তিনি অভিযোগ করেন, উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপে প্রবেশের চেষ্টা করলেই ইসরায়েলি ড্রোন গুলি ছুড়ছে। পাঁচজন মানুষ এগিয়ে গেলেই চারজন নিহত হচ্ছেন, একজন জীবিত ফিরে আসছেন।
গাজা সিটির অন্যান্য এলাকায়ও ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটি একই সময় হামলা চালায় গাজার শাতি শরণার্থী শিবির ও তাল আল-হাওয়া এলাকায়। এ ছাড়া নাসর জেলার লাভাল টাওয়ার এবং তার পাশে একটি বাড়িতেও বিমান হামলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী ক্যাম্পে আরেকটি হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে চারজন শিশু রয়েছেন। জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, এই হামলাটি জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআডব্লিউএ পরিচালিত একটি ক্লিনিকের পাশে করা চালানো হয়েছে ।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, রোববার সকাল থেকেই গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৮ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ২৮৩ জনে পৌঁছেছে এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৬৬, হাজার ৫৭৫ জন। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত ক্ষুধা ও অপুষ্টিজনিত ৪৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৪৭ জন শিশু।
আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, ড্রোন ও নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরক রোবট ব্যবহার করে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের হতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মানুষের চলাচল একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। চারদিকে ধোঁয়া ছড়িয়ে আছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তিনটি ডিভিশন গাজা সিটি ও উত্তর গাজায় এবং একটি ডিভিশন দক্ষিণের খান ইউনিসে অভিযান চালাচ্ছে। তারা দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ‘অনেক সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করা হয়েছে। তারা হামলার পরিকল্পনা করছিল।
রোববার গাজার সাধারণ মানুষের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পোপ লিও বলেন, পবিত্র ভূমির ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আমিও বলছি— সহিংসতা, জোরপূর্বক নির্বাসন ও প্রতিশোধের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ গড়া যায় না।
মন্তব্য করুন