গাজার অবরোধ ভাঙার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা দ্বিতীয় নৌবহর ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’কে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বুধবার (৮ অক্টোবর) সকালে ভূমধ্যসাগর থেকে ৯টি নৌযানের এই বহরকে আটক করা হয়। ইসরায়েল জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় প্রবেশের এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে এবং নৌবহরের সব জাহাজ ও যাত্রীকে ইসরায়েল বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) এক পোস্টে জানায়, “আইনি নৌ অবরোধ ভেঙে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশের আরেকটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করা হয়েছে।” তারা আরও জানায়, আটক যাত্রীদের সবাই নিরাপদ ও সুস্থ আছেন এবং খুব দ্রুত তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ফ্রিডম ফ্লোটিলার আয়োজক সংগঠন জানিয়েছে, তাদের একাধিক জাহাজকে ইসরায়েলি নৌবাহিনী ঘিরে ফেলে এবং জোরপূর্বক দখল করে নিয়ে যায়। তারা বলেছে, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সময় ইসরায়েলি বাহিনী রেডিও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং কিছু নৌযানে উঠে পড়ে সৈন্যরা।
এই ফ্লোটিলার একটি জাহাজে ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। তাকে বহনকারী জাহাজটির নাম ছিল ‘কনসেন্স’। তিনি ছাড়াও বহরে ছিলেন বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৫০ মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও চিকিৎসক।
ফ্রিডম ফ্লোটিলার এই নৌযাত্রার উদ্দেশ্য ছিল গাজায় অবরুদ্ধ মানুষের কাছে চিকিৎসা ও খাদ্যসহ মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং অবরোধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলা। কিন্তু ইসরায়েল আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, গাজার উপকূলে কোনো নৌযান প্রবেশ করতে পারবে না।
টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, আটক জাহাজ ও যাত্রীদের বর্তমানে ইসরায়েলি বন্দর আশদোডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাদের তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এর আগে, মাত্র কয়েক দিন আগে গাজামুখী সুমুদ ফ্লোটিলা নামে আরেকটি বহর আটক করেছিল ইসরায়েল। সেই বহরের ৪০টিরও বেশি জাহাজ এবং প্রায় ৪৭৯ মানবাধিকারকর্মীকে আটক করে পরে বিভিন্ন দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের দাবি, গাজার ওপর ইসরায়েলের আরোপিত নৌ অবরোধ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে এবং এই ধরনের অভিযান মানবিক সহায়তা কার্যক্রমকে বিপন্ন করছে।
ফ্রিডম ফ্লোটিলার আয়োজকরা বলছেন, ‘আমরা গাজার মানুষের পাশে আছি। ইসরায়েল যত বাধাই দিক না কেন, মানবতার এই যাত্রা থামবে না।’
ইসরায়েলি বাহিনী অবশ্য দাবি করছে, এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে’ এবং গাজায় অস্ত্র পাচার ঠেকাতে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা গাজার চলমান মানবিক সংকট ও ইসরায়েলের নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নতুন করে ক্ষোভ উসকে দেবে।
মন্তব্য করুন