এক সময়কার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ আজ কৌশলগত মিত্র। মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী একটি দেশ জোট বেঁধেছে আয়াতুল্লাহ খামেনির দেশ ইরানের সঙ্গে। অতীতে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বর্তমানে এই দুই দেশ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এক সুকৌশলী নিরাপত্তা নীতি গ্রহণ করেছে।
নিরাপত্তা সম্পর্কের জেরেই ইরাক এবার স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে, তারা তাদের মাটি বা আকাশসীমা ব্যবহার করে ইরান বা অন্য কোনো প্রতিবেশী দেশকে কখনোই হুমকির মুখে পড়তে দেবে না। দেশটিকে যে কোনো হুমকি থেকে সুরক্ষা দিতে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। বাগদাদ স্পষ্ট জানিয়েছে, ইরান বা অন্য কোনো প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে হুমকি সৃষ্টি করতে তাদের ভূমি ও আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
সোমবার তেহরানে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী লারিজানির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ইরাকের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কাসিম আল-আরাজি। কাসিম আল-আরাজি বলেন, ইরান বা প্রতিবেশী কোনো দেশকে হুমকির জন্য কোনোভাবেই ইরাকের ভূমি ও আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না। বাগদাদ তেহরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত নিরাপত্তা চুক্তির প্রতি সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
চলতি বছরই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় যখন গেল জুনে ইসরায়েল অতির্কিতভাবে তেহরানে সামরিক, পারমাণবিক এবং বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। ফলে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী পর্যন্ত নিহত হন। ইরাক তখনই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয় যে, ইসরায়েল ইরাকের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ইরানে এই হামলা চালিয়েছে।
ওই সময় ইরাক জানিয়েছিল যে, তারা ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণের সময় ইরাকি আকাশসীমা লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব লারিজানি তার পক্ষ থেকে বলেন, ইরাকের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে তার আলোচনায় নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ। সেক্ষেত্রে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে চাইলে তাদের নিরাপত্তা সহযোগিতাও জোরদার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের পাশে দাঁড়িয়ে ইরাক নিজেদের ভূখণ্ডকে নিরপেক্ষ রাখার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা শুধু কূটনৈতিক ভাষায় নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ভারসাম্যের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
মন্তব্য করুন