এক মাসের বেশি সময় ধরে চলছে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ। পুরো বিশ্বে এখন এই যুদ্ধ নিয়ে হিসাব-নিকাষ, আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে এই লড়াইয়ে ইসরায়েলকে সর্বাত্মক সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর নজরও এখন এই সংকটের দিকে। এতে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে।
ইতোমধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে ইউক্রেন থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ সরে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এখন স্থবির বা স্থির হয়ে আছে। আর এতে মস্কো লাভবান হচ্ছে। সামরিক শক্তিকে নতুন করে গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে রাশিয়া।
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠি হামাসের সঙ্গে রাশিয়ার বেশ ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। একই সাথে পুতিনের দেশের সম্পর্ক রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালি দেশ ইরানের সঙ্গেও। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, বর্তমানে মস্কো ও তেহরানের পূর্ণ মাত্রায় প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জেমস মার্টিন সেন্টার ফর নন-প্রোলিফারেশন স্টাডিজের রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হান্না নোট্টের মতে, রাশিয়া সরাসরি ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অস্ত্র সরবরাহ করেছে বা সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, এমনটা সত্য নয়। তবে এটা সত্য যে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক রয়েছে। রাশিয়া কখনো ফিলিস্তিনি সশস্ত্র যোদ্ধাদের সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করেনি এবং নিকট ভবিষ্যতে এমনটা করবে বলে মনে হয় না।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া এবং ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মধ্যে বিরাট সামরিক সহায়তার বিষয় রয়েছে, এমনটা ঠিক নয়। যদিও রাশিয়ার তৈরি সামরিক ব্যবস্থা গাজা উপত্যকায় পৌঁছেছে। সম্ভবত ইরানের সহযোগিতায় মিসরের সিনাই উপদ্বীপ হয়ে তা ঘটেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির কারণে পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহের একটা বড় অংশ এখন ইউক্রেনের বদলে ইসরায়েলের দিকে ঘুরে যাবে। এতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের গতিপ্রকৃতির অনেকটা পাল্টে যাবে। এবং এই অভিযানের গতিপ্রকৃতি উল্লেখযোগ্যভাবে রাশিয়ার পক্ষে যেতে পারে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে এই অঞ্চলে প্রভাব বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে রাশিয়া। মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের স্বার্থ রয়েছে। সেটা শুরু হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন আরবদের সমর্থনে অবস্থান নেওয়ার মধ্য দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলায় ওই অবস্থান নিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বাধীন রাশিয়া ইসরায়েলের শত্রু দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। বিশেষত ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাশিয়া-ইসরায়েল সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ যদি বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ে, ইরান, লেবাননসহ অন্যান্য আঞ্চলিক গোষ্ঠী যদি এই যুদ্ধে জড়িয়ে যায় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি হবে ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা ইসরায়েলের পক্ষে জোরালোভাবে অবস্থান নিলে ইরানের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিতে দ্বিধা করবেন না ভ্লাদিমির পুতিন।
মন্তব্য করুন