

রোপা আমন মৌসুমে ভালো ফলন পেয়েও কারেন্ট পোকার আক্রমণে হতাশার মুখে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কৃষকরা। চলতি মৌসুমে মাঠে ধান কাটার কাজ শুরু হলেও কারেন্ট পোকার আক্রমণে আশানুরূপ ধান ঘরে তুলতে পারছেন না তারা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডাকাতিয়া ও কাচিনা ইউনিয়নের কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, ছায়াযুক্ত স্থানে এই পোকার আক্রমণ বেশি দেখা গেছে।
উপজেলায় বেশ কিছু ছায়াযুক্ত স্থানে ধানের ক্ষেত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এসব ছায়াযুক্ত জমিতেই কারেন্ট পোকা (বিপিএইচ) বেশি সক্রিয়, ফসলের ওপর আক্রমণ বেশি হয়। ফলে যে ধান উঠেছে তা কৃষকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। অনেক ক্ষেতেই ধানের গাছ পোকায় শুকিয়ে তারের মতো সরু হয়ে গেছে। ধান কাটার সময় দেখা যায় সারি ধরে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ক্ষতিগ্রস্ত গাছগুলো।
কাচিনা ইউনিয়নের কাদিগর এলাকার কৃষক শামসুল হক জানান, এ বছর তিনি ২৮ কাঠা জমিতে ধান রোপণ করেছেন। কারেন্ট পোকার আক্রমণে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলন হয়নি। তিনি সারের ডিলারদের পরামর্শে পাঁচবার বিষ দিয়ে কারেন্ট পোকা থেকে রক্ষা পেয়েছেন। আরেক কৃষক সোহাগ মিয়া জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় ধান অনেক ভালো হয়েছে। তবে কারেন্ট পোকার আক্রমণে আশানুরূপ ধান হয়নি। কারেন্ট পোকার আক্রমণ না হলে কাঠাপ্রতি ৫-৬ মণ ধান পেতেন তিনি।
প্রবীণ কৃষক ইব্রাহিম খলিল জানান, যে খরচ হয়েছে ধান চাষে, খরচই উঠবে না। কারেন্ট পোকা সব ধান নষ্ট করে ফেলছে। কিছু কৃষক অবশ্য বলেছেন যে, যে ধান হয়েছে তাতে অন্তত খরচ তুলতে পারবেন, কিন্তু অনেকেই পুরো খরচও উঠবে না বলে মনে করছেন। খরচ উৎপাদনের হিসাব একদিকে, অন্যদিকে ধানে পোকার আক্রমণ ফসলের মান ও পরিমাণ দুটোই কমিয়ে দিয়েছে। বনের পাশে হওয়ায় ছায়া বেশি, এটাই ক্ষেতগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলছে। অনেকে বলেছেন তারা ডিলারের পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ করে ক্ষতি কিছুটা কমাতে পেরেছেন, কিন্তু তা সার্বিক সমাধান নয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান, এই বছর উপজেলায় ১৯ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। উপজেলার ডাকাতিয়া ও কাচিনা ইউনিয়নে বনের পাশে ছায়াযুক্ত কিছু জমি রয়েছে। ছায়াযুক্ত স্থানে বিপিএইচের আক্রমণ বেশি হয়। মৌসুমের শুরুতেই কৃষি অফিস থেকে স্কোয়াড গঠন করা হয়েছিল। তারা নিয়মিত মনিটরিং করছে, কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ভালুকা উপজেলায় ব্রি ধান ৫১ জাতের চাষটা বেশি হয়ে থাকে। এ বছর দেখা গেছে, ব্রি ধান ৫১-তে রোগবালাই, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়েছে। জাত পরিবর্তন করে ব্রি ১০৩ চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। আগামী মৌসুমে ব্রি ধান ৫১ পরিবর্তন করে যেন ব্রি ধান ১০৩ চাষ করেন।
মন্তব্য করুন