বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিনা বিচারে কারাবন্দি হাজারো ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি অফার কারাগার। ছবি : সংগৃহীত
ইসরায়েলি অফার কারাগার। ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেথলহেমে নিজের ঘরে মায়ের পাশে বসে ইয়াজেন আলহাসনাত ঘুম তাড়াতে চোখ ঢলছিল। ১৭ বছরের এই কিশোর আগের রাতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে। প্রায় পাঁচ মাস আগে এক ভোরে তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

এই পাঁচ মাস ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ছিল ইয়াজেন। কোনো অভিযোগ ছাড়াই তাকে শুধু নির্বাহী আদেশে আটক রাখা হয়। ইয়াজেন বিবিসিকে বলেছে, ‘তাদের (ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ) কাছে একটি গোপন ফাইল আছে। তবে সেই ফাইলে কী আছে, সেটা আপনাকে তারা বলবে না।’

দেড় মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বাত্মক হামলার পর গত ২৪ নভেম্বর প্রথমবারের মতো চার দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে ইসরায়েল ও হামাস। এরপর দুই দফা এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে একমত হয় দুপক্ষ। তবে গত শুক্রবার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হলেও চুক্তি বাড়ানো নিয়ে ঘোষণা দেয়নি কোনো পক্ষই। এই চুক্তির আওতায় হামাসের হাতে ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে মুক্তি পাওয়া ১৮০ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের একজন ইয়াজেন।

হামাস নেতারা আলজাজিরা বলেছেন, ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্ত করতে ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে ঢুকে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলি হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসেন তারা। তবে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে যত ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন, তার চেয়ে রেকর্ডসংখ্যক ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েলি সেনারা। ৭ অক্টোবরের পর নির্বাহী আদেশে আটকের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যায় ঠেকেছে।

তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের পর থেকে ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় সাড়ে চার হাজার ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আটক ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা এই হিসেবে গোনায় ধরা হয়নি।

শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স অ্যান্ড এক্স-প্রিজনারস অ্যাফেয়ার্স অথরিটি এবং ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটি বলেছে, শুক্রবার ভোরে আরও ১৬ ফিলিস্তিনি নাগরিককে আটক করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ৭ অক্টোবরের পর থেকে পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে আটক ফিলিস্তিনি বন্দির সংখ্যা ৪ হাজার ৪২০ জনে দাঁড়িয়েছে।

গত বছর ইসরায়েল কর্তৃক গ্রেপ্তার ফিলিস্তিনিদের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৬৭ সালের দ্বিতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেম, গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীর দখল করার পর থেকে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েল। তাদের মধ্যে একটি বড় সংখ্যককে নির্বাহী আদেশে আটক করা হয়েছে।

আলজাজিরার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সব মিলিয়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

এত ফিলিস্তিনি বন্দির কারণ কী

১৯৯৩ সালে ওসলো চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনো অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিশাল একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিজস্ব দণ্ডবিধি ও বিচারব্যবস্থা থাকলেও ফিলিস্তিনিরা সহজেই ইসরায়েলি সামরিক আদালতের এখতিয়ারে পড়তে পারেন। একবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে আটক হলে সামরিক আদালতে দণ্ডিত হওয়ার হার ৯৯ শতাংশ।

ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি অধিকাংশ ফিলিস্তিনিকে আধা-বিচারিক প্রক্রিয়া হিসেবে পরিচিত নির্বাহী আদেশে আটক করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিনিদের প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের জেল দেওয়া হয়। এরপর তাদের সাজার মেয়াদ কোনো অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই বারবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়ানো যেতে পারে। সাজানো এই সামরিক আদালতে তাদের দীর্ঘদিনের সাজা দেওয়া হয়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের আইনজীবী সুবিধা বা যথাযথ প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়। যদিও একই অঞ্চল থেকে আটককৃত ইসরায়েলি নাগরিকদের দেশটির বেসামরিক আদালতে বিচার করা হয়।

গত নভেম্বরে হামাস ও ইসরায়েলের বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি দিতে ৩০০ ফিলিস্তিনি বন্দির একটি তালিকা প্রকাশ করে ইসরায়েল। সেখানে দেখা যায়, ৩০০ জনের মধ্যে ২৩৩ ফিলিস্তিনির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। তাদের শুধু নির্বাহী আদেশে বন্দি রাখা হয়। এদের মধ্যে সিংহভাগই শিশু। সবচেয়ে ছোট বন্দির বয়স ১৪ বছর।

ইসরায়েলি কারাগার থেকে সম্প্রতি মুক্তপ্রাপ্ত ৩০০ বন্দির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় যিনি বন্দি ছিলেন তিনি ১০২ মাস বা সাড়ে আট বছর জেলে ছিলেন। আর সবচেয়ে কম সাজা খাটা ব্যক্তিকে দুই মাস আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

কারাগারে বন্দিদের মারধর

বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় মুক্তিপ্রাপ্ত বেশ কয়েক জন ফিলিস্তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি কারাগারে তাদের মারধর ও অপমান করা হয়েছে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর বন্দিদের মারধরের ঘটনা আরও বেড়ে যায়।

৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলে আসছে, ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি বন্দিদের পানি, খাবার, চিকিৎসা ও অন্যান্য জিনিস বরাদ্দের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সীমিত বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

ইসরায়েলি কারাগার থেকে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত তিন ফিলিস্তিনি কিশোরের সংখ্যা কথা বলেছে বিবিসি। তারা জানিয়েছে, তারা তিনজনই পড়াশোনা শেষ করতে চায়। তবে তারা যে কোনো সময় আটক হওয়ার ভয়ে থাকে। ইয়াজেন বলেছে, ‘তারা আমাদের আরেকটি বড় কারাগারে ছেড়ে দিয়েছে।’ ছেলের দিকে তাকিয়ে ইয়াজেনের মা বলেছেন, ‘এখানে কোনো শান্তি নেই। তারা যে কোনো সময় তোমাকে তুলে নিয়ে যেতে পারে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আইপিএলে ভালো করলেও ভারত দলে জায়গা নিশ্চিত নয়

ফেব্রুয়ারির কত তারিখে রোজা শুরু হতে পারে 

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর উদ্বেগ

সরকারি কর্মচারীরা দাফনের জন্য পাবেন টাকা

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

৫ অভ্যাসে বার্ধক্যেও ভালো থাকবে হৎপিণ্ড

অনশন প্রত্যাহার করল বেরোবি শিক্ষার্থীরা

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

১০

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

১১

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

১২

ছাত্র সংসদের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ ঘিরে বিভক্ত বেরোবির শিক্ষার্থীরা

১৩

বন্ধুত্ব চাইলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন : লায়ন ফারুক

১৪

গাজা সীমান্তে ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করল মিসর

১৫

জাজিরা হাসপাতালে দুদকের অভিযান, অনিয়মে জর্জরিত স্বাস্থ্যসেবা

১৬

ডেজার সভাপতি প্রকৌশলী রুহুল আলম, সম্পাদক প্রকৌশলী চুন্নু

১৭

নানা আয়োজনে গাকৃবিতে মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন

১৮

বিপিএলের ফিক্সিং ইস্যুতে যা বললেন তামিম

১৯

রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু বুধবার

২০
X