বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসরায়েল। রাজধানী তেলআবিবসহ বিভিন্ন শহরে হাজারো মানুষ সরকারবিরোধী আন্দোলনে সড়কে নেমে এসেছেন। তারা বেশ কয়েকটি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে জেরুজালেমে ইসরায়েলি সংসদ ভবনের সামনে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হন। ফিলিস্তিনের গাজায় গত বছর হামলা শুরুর পর এটিই সবচেয়ে বড় আন্দোলন বলে খবর প্রকাশ করছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
রোববার (৩১ মার্চ) জড়ো হওয়া আন্দোলনকারীরা গাজা যুদ্ধ বন্ধে জোরাল দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে হামাসের কাছে বন্দি ইসরায়েলিরা মুক্তি পাবে। সে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পদত্যাগ করে আগাম নির্বাচন দিতে হবে। খবর আল জাজিরার।
গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন। হামাস যোদ্ধারা ২৫০ জনের বেশি বাসিন্দাকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় নেতানিয়াহু সরকারের ব্যর্থতা সামনে আসে। দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকারি সংস্থাগুলো। বিরোধীরা বলছে, নেতানিয়াহু দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার হাতে দেশ নিরাপদ নয়।
এর জেরে বেশ কয়েক দফায় দেশটিতে বিক্ষোভ হয়। সর্বশেষ শনিবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ছড়িয়েছে তেলআবিব, জেরুজালেম, হাইফা, বেয়ার শেভা, সিজারিয়াসহ অন্যান্য শহরে।
আন্দোলনকারীরা গাজায় বন্দি ইসরায়েলিদের মুক্তি নিশ্চিতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান। তারা এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে সড়কে অবস্থান নেন।
নভেম্বরে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে এক দফায় যুদ্ধবিরতির ফলে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে ১০০ জনেরও বেশি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস।
আন্দোলনে সেসব জিম্মিদের স্বজনরা অংশ নিচ্ছেন। তাদের ধারণা, যুদ্ধ বন্ধ করে বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমের তাদের স্বজনদের দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
এদিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়েছে। এ নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ছে।
৭৪ বছর বয়সী নেতানিয়াহু ইসরায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বর্তমানে ষষ্ঠ মেয়াদে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে বিচার বিভাগীয় সংস্কার, দুর্নীতি, গাজা যুদ্ধ ও বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে না পারায় বর্তমানে তার জনপ্রিয়তা অনেক কমে গেছে।
তার নেতৃত্বের প্রতি সামান্যই আস্থা রাখছেন ইসরায়েলিরা। এমনকি এখন নির্বাচন হলে বিরোধীদের কাছে একেবারে গোহারা হারবেন তিনি।
এদিকে এ নেতার হার্নিয়া ধরা পড়েছে। এই জন্য রোববার তার একটি অস্ত্রোপচার করা হবে। এতে স্বাভাবিকভাবে তিনি রাষ্ট্রীয় কাজে কিছুটা নীরব।
এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে নেতানিয়াহুকে একটি পেসমেকার লাগাতে হয়েছিল। তখনও নেতানিয়াহুর উগ্র ডানপন্থি সরকারের বিচার বিভাগীয় সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেয়। হামাসে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলা চালালে এ বিক্ষোভে ভাটা পড়ে।
মন্তব্য করুন