গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে গত বছর থেকেই জ্বলন্ত উনুন হয়ে আছে গোটা মধ্যপ্রাচ্য। এমন পরিস্থিতিতে একই সঙ্গে কয়েকটি ফ্রন্টে ইরানপন্থিদের হামলার জবাবে ১ এপ্রিল তেহরানকে সতর্ক করতে দামেস্কের ইরানি দূতাবাসে হামলা চালিয়ে বসে তেলআবিব, পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় রোববার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তেহরান। পাল্টা এ হামলার কড়া জাবাব দেওয়ার কথা জানায় ইরাসয়েলি সামরিক বাহিনী। তারপরই বৃহত্তর যুদ্ধ নিয়ে নিজেদের স্পষ্ট অবস্থান জানায় ইরান।
শনিবার রাতে অপারেশন ট্রু প্রোমিজ নামে সামরিক অভিযান শুরু করে ইরান। এ প্রতিক্রিয়া সীমিত ও নির্ধারিত হবে বলেও জানায় ইরানি কর্মকর্তারা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান কী করতে সক্ষম তার সামান্য চিত্র দেখাল মাত্র। এটা এমন একটি দৃশ্য যা কখনো কেউ দেখেনি।
এমন হামলার পরেই পাল্টা হামলার আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী, একই সঙ্গে ইসরায়েলের প্রতিও সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া বিবৃতিতে আইআরজিসির এক কমান্ডার জানান, ইসরায়েল যদি প্রতিক্রিয়া দেখায় তাহলে তার চেয়েও কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাবে ইরান।
জাতিসংঘে নিয়োজিত ইরানের মিশন জানিয়েছে, ইসরায়েলের ওপর তাদের আক্রমণ সমাপ্ত হয়েছে। তারা এ সংঘাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে থাকার বিষয়ে সতর্ক করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলের দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে হামলার প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পোস্টে আরও বলা হয়, বিষয়টি এখানে শেষ বলে মনে করা যেতে পারে। তবে ইসরায়েলি সরকার যদি আরেকটি ভুল করে, ইরানের প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট বেশি কঠোর হবে। এ আক্রমণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে।
এদিকে হামলার আগেই ইসরায়েলের হয়ে হামলা মোকাবিলার জন্য লৌহবর্ম হয়ে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আমেরিকা। ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী জানায়, ইসরায়েলের হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের প্রতি সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে তার কড়া জবাব দেওয়া হবে।
ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ডেভিড ডেস রোচেস আলজাজিরাকে জানান, ইরান ইসরায়েলি ভূখণ্ডে সরাসরি আক্রমণ করায় ঘটনায় অনেকেই বিস্মিত। সাবেক এ মার্কিন সেনা কর্মকর্তা জানান, ইরানের এমন আক্রমণ অঞ্চলটিতে সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ হামলার কারণে হয়তো ইসরায়েলের গাজার ওপর আক্রমণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এমনকি রাফাহতে সামরিক অভিযান শুরু না করতে ইসরায়েরের ওপর যে চাপ ছিল এ হামলার কারণে তা হয়তো সরে যাবে।
মার্কিন এ বিশ্লেষক মনে করেন, ইসরায়েল গাজায় তার কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের বিনিময়ে আঞ্চলিক সংঘাত এড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সম্ভাব্য সুবিধা আদায় করে নিতে পারে। এদিকে ইরানের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা।
মন্তব্য করুন