বিএসএস/এএফপি
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৫১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সংকটে পাকিস্তানের গাধা ব্যবসায়ীরা

গাধা। ছবি : সংগৃহীত
গাধা। ছবি : সংগৃহীত

একসময় পাকিস্তানের বাণিজ্যিক কেন্দ্র করাচির সড়কগুলো গাধার ডাকেই মুখরিত থাকত, কিন্তু এখন বেড়ে চলা খরচ এবং নগরায়ণের কারণে গাধার ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে।

গাধায় টানা গাড়িগুলো দক্ষিণ করাচির পাইকারি বাজারগুলোর জন্য পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। শহরের অপ্রশস্ত সড়কগুলোতে সাধারণ যানবাহনের প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ায়, গাধাগুলোই ছিল প্রধান মাধ্যম।

এ ছাড়া নিম্নআয়ের মানুষের জন্য গাধা একটি স্থিতিশীল জীবিকা প্রদান করত। তাদের সহনশীলতা এবং কম খরচের কারণে গাধাগুলো ছিল সবার আস্থার প্রতীক। তবে, বর্তমান সময়ে দেশটি মুদ্রাস্ফীতিতে খাদ্যের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শহরের জনসংখ্যা পাকিস্তানের স্বাধীনতার আগে যা ছিল, তার প্রায় ৫০ গুণ বেড়ে গেছে, ফলে গাধাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।

মোহাম্মাদ আতিফ, ‘রাজা’ নামের এক গাধার মালিক, তিনি বলেন, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আমি চাই আমার সন্তানরা পড়ালেখা করে অন্য কিছু করুক।

তিনি আরও জানান, রাজার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭৫০ রুপি খরচ হয়, যা আগে ছিল মাত্র ২০০ রুপি। আতিফ বলেন, এখন এ কাজ থেকে জীবিকা অর্জন করা অসম্ভব। ভালো দিনে ৪,০০০ রুপি উপার্জন হলেও তা তার পরিবার এবং গাধার খরচ মেটাতে যথেষ্ট নয়।

উল্লেখ্য, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাকিস্তানে প্রায় ৬০ লাখ গাধা আছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই করাচিতে। স্থানীয় পশু ব্যবসায়ী আসলাম শাহ জানান, গাধার চাহিদা কমে গেছে। মাসের পর মাস চলে যায়, কিন্তু আমরা একটি গাধাও বিক্রি করতে পারি না বলে জানান তিনি।

পাকিস্তানে বর্তমানে গাধার পরিবর্তে ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলার রিকশা পণ্য পরিবহনের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ২১ বছর বয়সী আলি উসমান বলেন, রিকশাগুলো দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে পারে, তাই গাধার চাহিদা কমছে।

এদিকে যোগাযোগ বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘযাত্রা এবং খারাপ রাস্তার কারণে গাধাগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। উপযুক্ত সরঞ্জামের অভাবে মালিকরা দড়ি এবং কাপড়ের টুকরো দিয়ে গাধাদের বেঁধে রাখছেন, যা তাদের স্বাস্থ্যে ক্ষতি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদে।

পাকিস্তানের সমাজের গাধা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, ব্যবসায়ীরা যখন দেউলিয়া হওয়ার মুখে, তখন তা দেশটির সংস্কৃতির জন্য সতর্ক সংকেত। ৭৬ বছর বয়সী গাধা ব্যবসায়ী গোলাম রাসুল বলেন, এ কাজ কিয়ামত পর্যন্ত চলবে। দুএক দিন কাজ না পেলে সমস্যা নেই, কেউ না কেউ আমাদের প্রয়োজন পড়বে।

পাকিস্তানের গাধা ব্যবসায়ীদের সংকট আধুনিক নগরায়ণ ও অর্থনৈতিক চাপের একটি প্রতিফলন। গাধার উপস্থিতি এবং তাদের মালিকদের অভিজ্ঞতা শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যাতে গাধা এবং তাদের মালিকদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করা যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের নিবন্ধন বাতিল চায় জুলাই ঐক্য 

ভারত থেকে পুশইন ব্যক্তিদের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন

সন্ধ্যার মধ্যে ৮ অঞ্চলে ঝড়ের পূর্বাভাস

আদালতে মমতাজ

ববি উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে অনশনে শিক্ষার্থীরা

জুলাইয়ে গুলিবিদ্ধ এনামের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান 

শেষ হলো এসএসসির লিখিত পরীক্ষা, ১৫ মে শুরু ব্যবহারিক

ক্লাব বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ ১৫,০০০ আর্জেন্টাইন সমর্থক

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশ / আখাউড়ায় ১৫টি টিকিটসহ দুই কালোবাজারি গ্রেপ্তার

রংপুরে বাসচাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত

১০

এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিতির কারণ জানতে তদন্তে কমিটি 

১১

চাঁদার দাবিতে দলিল লেখকদের লাঞ্ছিতের অভিযোগ

১২

সাভারে অবৈধ ফিশ ও পোলট্রি ফিড কারখানায় অভিযান, জরিমানা লাখ টাকা

১৩

হবিগঞ্জে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০

১৪

আ.লীগ নেতার গোয়ালঘরে মিলল অস্ত্রসহ ২ রাউন্ড গুলি

১৫

নতুন নিষেধাজ্ঞা কি থামাতে পারবে ইরানের পরমাণু অভিযাত্রা?

১৬

৭ জেলায় বজ্রবৃষ্টির আভাস, সতর্কতা জারি

১৭

আন্দালিব পার্থের স্ত্রীকে বিদেশ যেতে বাধা

১৮

যুদ্ধবিরতির পর মাঠে ফিরছে পিএসএল, পিসিবি দিল তারিখ

১৯

বিশ্বের সবচেয়ে স্বীকৃত সন্ত্রাসী মোদি : পাকিস্তান

২০
X