ভারত এবং পাকিস্তান উপমহাদেশের দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্র। সম্প্রতি তারা কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জেরে যুদ্ধে জড়িয়েছে। বুধবার ভারত পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পরিচালিত এ অভিযানে ৯টি সন্ত্রাসী অবকাঠামো নিশানা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। অন্যদিকে পাকিস্তান দাবি করেছে যে তারা ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে, যদিও ভারত এই দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
দুই দেশের এ হামলা-পাল্টা হামলায় কে কার চেয়ে এগিয়ে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি পরমাণু শক্তির দিক থেকে কে কার চেয়ে এগিয়ে তা নিয়েও নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।
কেন ভারত পাকিস্তানে হামলা চালাল? ভারতীয় সূত্র অনুযায়ী, গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর একটি মারাত্মক হামলার প্রতিশোধ নিতে এই হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে পেহেলগাম শহরে সন্ত্রাসীরা ২৬ পর্যটককে হত্যা করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হামলাকারীরা পুরুষদের নারীদের থেকে আলাদা করে এবং অ-মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করতে চায়। হামলার পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় এবং ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী এখনো তাদের খুঁজে পেতে ব্যর্থ।
ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক শক্তি
বিশ্ব সামরিক শক্তি সূচক (গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার) ২০২৫ অনুযায়ী, ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম সামরিক শক্তি, যেখানে পাকিস্তান দ্বাদশ স্থানে রয়েছে। ২০২৪ সালে, ভারত সামরিক খাতে ৮৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যা তার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৩ শতাংশ, যেখানে পাকিস্তানের সামরিক ব্যয় ছিল ১০.২ বিলিয়ন ডলার, যা তাদের জিডিপির ২.৭ শতাংশ।
ভারতের মোট সামরিক কর্মী সংখ্যা ৫১ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫০ জন। অন্যদিকে পাকিস্তানের ১৭ লাখ ৪ জন। ফলে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের সেনাসংখ্যা প্রায় তিন গুণ। ভারতীয় বিমান বাহিনীর কাছে রয়েছে ২,২২৯টি সামরিক বিমান, যেখানে পাকিস্তানের কাছে রয়েছে ১,৩৯৯টি।
ভারতের কাছে তিন হাজার ১৫১টি কমব্যাট ট্যাঙ্ক রয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের রয়েছে এক হাজার ৮৩৯টি। ভারতীয় নৌবাহিনীর ২৯৩টি নৌযান রয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের রয়েছে ১২১টি।
ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তি
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক অস্ত্র বিলোপ প্রচারাভিযান (আইসিএএনডব্লিউ) অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পারমাণবিক অস্ত্রে ভারত ব্যয় করেছে ২.৭ বিলিয়ন ডলার এবং পাকিস্তান ব্যয় করেছে ১ বিলিয়ন ডলার।
ভারত ১৯৭৪ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করে এবং ১৯৯৮ সালে ৫টি পরীক্ষা চালিয়ে নিজেকে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। এর কিছুদিন পরই পাকিস্তান তাদের প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করে।
ভারতের কাছে শমসের বা জাগুয়ার সিরিজের পরমাণু শক্তিধর যুদ্ধবিমান রয়েছে। এটি ১৬০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তু নিশানা করতে পারে। এরপর ১৯৮৫ সালে ভাসরা বা মিরাস সিরিজের যুদ্ধবিমার যুক্ত করেছে। এটি ১৮৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে। এছাড়া দেশটির বহরে সুখোই সু-৩০এমকেআই সিরিজের বিমান রয়েছে। এটিও ১৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের বহরে ১৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নয়েছে। এছাড়া দেশটির বহরে মিরাস সিরিজের ২১০০ কিলোমিটার রেঞ্জের যুদ্ধবিমান এবং সবশেষ ২০১০ সালে যুক্ত হওয়া জেএফ-১৭ থান্ডার সিরিজের চীনা যুদ্ধবিমান রয়েছে। এটি ১২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত নিশানা করতে সক্ষম।
ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা
ভারতের কাছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এর অন্যতম হলো ব্রাম্মস, নির্ভয়, প্রহর, অগ্নি১-৫ এবং কে-৪ ও কে-১৫ সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলো ৩০০ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ৩৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত নিশানা করতে সক্ষম।
অন্যদিকে পাকিস্তানের হাতফ১-৮, শাহীন ৩ ও আবাদিল সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এগুলো ৩৫০ কিলোমিটার থেকে শুরু করে দুহাজার ৭৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে।
সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২০২৪ সালে ভারত ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক, যেখানে পাকিস্তান পঞ্চম স্থানে রয়েছে। ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলো রাশিয়া, ফ্রান্স, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র। এরমধ্যে রাশিয়া থেকে ভারত ৩৬ শতাংশ অস্ত্র, ফ্রান্স থেকে ৩৩ শতাংশ এবং ইসরায়েল থেকে ১৮ শতাংশ অস্ত্র সহায়তা পায় ভারত।
পাকিস্তানের প্রধান সরবরাহকারী চীন, যা তাদের ৮১ শতাংশ অস্ত্র সরবরাহ করেছে।এছাড়া তুরস্ক থেকে ৬ শতাংশ এবং নেদারল্যান্ডস থেকে ১০ শতাংশ অস্ত্র সহায়তা পায় দেশটি।
অনুবাদ : মুতাছিম বিল্লাহ
মন্তব্য করুন