ভারতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে খ্যাতনামা স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়্যার’ (The Wire)। দেশটির বহু ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অভিযোগ করছেন, তারা ওয়েবসাইটটি অ্যাক্সেস করতে পারছেন না।
শুক্রবার (৯ মে) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ‘দ্য ওয়্যার’ কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশজুড়ে বিভিন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থা (আইএসপি) তাদের ওয়েবসাইট ব্লক করে দিয়েছে।
জবাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত এই সংস্থাগুলো বলেছে, ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০০-এর অধীনে ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘দ্য ওয়্যার’ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ ধরনের সেন্সরশিপ সংবিধানে নিশ্চিত করা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সরাসরি লঙ্ঘন। এটি একটি অযৌক্তিক ও স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত, যার পেছনে কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা বা কারণ সরকার জানায়নি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এটি এমন এক সময়ে ঘটল যখন ভারতে সত্যভিত্তিক, বিবেকবান এবং যুক্তিনির্ভর সংবাদ ও তথ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে এমন কণ্ঠরোধ গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক বার্তা বহন করে।
‘দ্য ওয়্যার’ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং যাবতীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তারা আরও বলেছে, গত ১০ বছর ধরে আমাদের সাংবাদিকতা সাধারণ পাঠকদের সমর্থনে টিকে আছে। আজকের এই চ্যালেঞ্জিং সময়েও আমরা আশাবাদী যে, পাঠকরা আমাদের পাশে থাকবেন। আমরা সত্যনিষ্ঠ ও ন্যায্য সাংবাদিকতা থেকে পিছু হটবো না।
প্রসঙ্গত, এই ঘটনার পটভূমিতে রয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা। সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ভারত দাবি করে, পাকিস্তান সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়ে জবাব দেওয়া হয়েছে।
একই সময়ে ভারত সরকার পাকিস্তানভিত্তিক কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেল, ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট এবং সংবাদমাধ্যমের সোশ্যাল হ্যান্ডল ব্লক করার নির্দেশ দেয়।
এ প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার এক্স (সাবেক টুইটার) জানায়, ভারতের সরকার তাদের অন্তত ৮,০০০ অ্যাকাউন্ট ব্লক করতে বলেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, অ্যাক্টিভিস্ট এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কিছু গণমাধ্যমের নামও।
অবশ্য এখন পর্যন্ত ‘দ্য ওয়্যার’ বন্ধের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসেনি। এই ঘটনাকে অনেকেই ভারতের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় আরেকটি আঘাত হিসেবে দেখছেন।
মন্তব্য করুন