দেশে সারের আমদানিনির্ভরতা কমাতে বন্ধ থাকা কারখানাগুলো চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব কারখানা গ্যাসের অভাবে উৎপাদন করতে পারছে না। পাশাপাশি সার কারখানায় সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম নিয়েও পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এ অবস্থায় সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ, চাহিদা, উৎপাদন ক্ষমতা, ভর্তুকি পর্যালোচনা করতে ছয় সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মনির হোসেন চৌধুরীকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। আর সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেন অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. খোরশেদ আলম, বিসিআইসির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মো. গোলাম ফারুক এবং অর্থ বিভাগের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ গভর্ন্যান্স স্কিমের সিনিয়র কনসালট্যান্ট মো. কামরুজ্জামান। আজ বৃহস্পতিবার কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
কমিটির সদস্য সচিব পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান গতকাল এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, শুধু কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (আজ) প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, বৈঠক হওয়ার পর সামনে কী করা হবে, তা বোঝা যাবে।
জানা গেছে, দেশের সার কারখানাগুলোর মধ্যে বর্তমানে ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ছাড়া অন্য চারটি বড় কারখানা গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকা কারখানাগুলো হচ্ছে যমুনা সার কারখানা, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (এএফসিসিএল), চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো)। এই কারখানাগুলোর সম্মিলিত গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ২১৩ মিলিয়ন ঘনফুট।
গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি গ্যাস সরবরাহ, সারের চাহিদা ও বিসিআইসির উৎপাদন ক্ষমতা, সার উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ভর্তুকির স্তর ইত্যাদি পর্যালোচনা করবে। পাশাপাশি গ্যাস সংকটের কারণে বর্তমানে বন্ধ থাকা বিসিআইসির চারটি কারখানায় ইউরিয়া সরবরাহ ও মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত অর্থনৈতিক ও পরিচালনগত কারণগুলো বিশ্লেষণ করে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করবে কমিটি। চলতি বছরের মে পর্যন্ত পেট্রোবাংলার গ্যাসের বকেয়া থাকা ৯৬৪ কোটি পরিশোধের বিষয়েও আলোচনা করবে কমিটি।
বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা ছিল ১ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন টন। তার আগের বছর চাহিদা ছিল ১ দশমিক ৭৪৮ মিলিয়ন টন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার ইউরিয়া আমদানিতে ৫৯৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৬৪৩ মিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ১৩২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে মোট ৩ দশমিক ৩০ মিলিয়ন টন ইউরিয়া আমদানি করা হয়েছে।
এ ছাড়া অ-ইউরিয়া সারের জন্য গত অর্থবছরে সরকার ১ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত টিএসপি, ডিএপি এবং এমওপি সারের সম্ভাব্য ব্যয় ছিল ৩৯৯ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলার, এবং টিএসপি ও ডিএপির কাঁচামালের জন্য অতিরিক্ত ৬৯ দশমিক ২৮ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছিল। সরকার চলতি অর্থবছর এক দশমিক ৩৫ মিলিয়ন টন ইউরিয়া সার আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যার আনুমানিক ব্যয় ৫৪০ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া টিএসপি ও ডিএপির কাঁচামালের জন্য ১৭১ মিলিয়ন ডলারের সংস্থান রাখা হয়েছে।
মন্তব্য করুন