প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি কাটাতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়ার জন্য বারবার নির্দেশনা দিচ্ছেন। তবু সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নে গতি ফেরানো যাচ্ছে না। বরং চলতি অর্থবছর এর আরও অবনতি হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে গত ৬ মাসের এডিপি বাস্তবায়নের হার নেমে গেছে গত এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে। অর্থাৎ এ সময় মোট এডিপি বরাদ্দের মাত্র ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।
গতকাল মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অর্থবছরের (জুলাই-ডিসেম্বর) মাসের এডিপির এ অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
গত এক যুগের বিভিন্ন অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১২-১৩ অর্থবছরে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। সেই সময় ২৮ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। এ ছাড়া ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৭ শতাংশের ওপর এডিপি বাস্তবায়ন হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও বাস্তবায়ন হার ২৭ ছিল শতাংশের কাছাকাছি। মূলত ২০২০-২১ অর্থবছর থেকেই এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি শুরু হয়েছে। ওই অর্থবছরে বাস্তবায়ন হার ছিল ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে একটু বেড়ে হয় ২৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবারও এডিপি বাস্তবায়নে ধস নামে। ওই অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হয় ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এবার তার চেয়েও নিচে নেমে এসেছে।
এদিকে পুরো অর্থবছরের তুলনায় কম হলেও একক মাসের হিসাবে ডিসেম্বরে এডিপি বাস্তবায়ন কিছুটা বেশি হয়েছে। গত অর্থবছর ছাড়া গত এক যুগের মধ্যে চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসেই সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। আইএমইডির তথ্যানুযায়ী, শুধু ডিসেম্বরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। যদিও অন্য অর্থবছরগুলোতে ডিসেম্বরে বাস্তবায়ন হার ছিল ৭ শতাংশের কাছাকাছি।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট ১ হাজার ৩৯২টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এগুলো বাস্তবায়নে এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয় ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। অর্থবছরের ৬ মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকা এসব প্রকল্পের বিপরীতে খরচ হয়েছে মাত্র ৬১ হাজার ৭৩৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
প্রথম ৬ মাসে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভাগটি খরচ করেছে ১২ হাজার ২২৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৩০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। খরচের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বিদ্যুৎ বিভাগ ৬ মাসে খরচ করেছে ৯ হাজার ৩৯৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যা বরাদ্দে ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ ছাড়া সড়ক ও পরিবহন বিভাগ খরচ করেছে ৫ হাজার ৫৭৪ কোটি ৮০ লাখ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় ৪ হাজার ৬৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ করেছে।
বরাদ্দের তুলনায় বাস্তবায়ন অগ্রগতিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে আইএমইডি। বিভাগটি বাস্তবায়ন করেছে ৯৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে ৭৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন করেছে ৭১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
অন্যদিকে অর্থবছরের ছয় মাস পার হলেও ১০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি পাঁচটি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের একটি প্রকল্পে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ৬ মাসে তারা খরচের খাতা খুলতে পারেনি। বাকি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোর গড় অগ্রগতি প্রায় ৩০ শতাংশ।