এ জেড ভূঁইয়া আনাস
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১০ এএম
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গরমে কেনাকাটায় ঝোঁক বাড়ছে অনলাইনে

বড় হচ্ছে ব্যবসা
গরমে কেনাকাটায় ঝোঁক বাড়ছে অনলাইনে

রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আবদুল ওহাব। পরিবার নিয়ে উত্তরা ৯ নম্বরে বাসা ভাড়া করে থাকেন। সম্প্রতি ঢাকার তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ছোট বাচ্চার জন্য কিনতে হয়েছে চার্জার ফ্যান। চাকরিজীবী হওয়ায় মার্কেটে গিয়ে ফ্যান কেনার ঝামেলা এড়াতে কিনেছেন একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠান থেকে। ৩০ শতাংশ ছাড়ে কেনা ফ্যানটি বাসায় এসে পৌঁছেছে মাত্র দুই দিনে। জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, অফিসের চাপে মাঝে মাঝে মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন অনলাইনের সহায়তা নিই। এখন পর্যন্ত একবার শার্ট কিনে প্রতারিত হয়েছি। তবে এখন যেহেতু ক্যাশ অন ডেলিভারিতে কেনার সুযোগ হয়েছে; তাই নিম্নমানের পণ্য চাইলেই গছিয়ে দেওয়ার সুযোগ কম।

শুধু ওহাব নন, দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাব বিস্তারের পর থেকে স্কুলশিক্ষক আমিরুল, সরকারি চাকরিজীবী এনামুল ও ব্যাংকার সুলাইমানও মাঝেমধ্যে অনলাইন থেকে পণ্য কিনছেন। কেউ কেউ অনলাইনে পণ্য কিনে প্রতারিতও হয়েছেন। এজন্য বড় অফার দেখেই অনলাইনে পণ্য কেনায় ঝাঁপিয়ে না পড়ার পরামর্শ তাদের।

ধীরে ধীরে দেশের অনলাইন ব্যবসা বড় হচ্ছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এক বছরে দেশের ই-কমার্স খাতে লেনদেন বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ই-কমার্সে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭২ কোটি টাকা। আর অর্থবছর হিসাব করলে ব্যাংকের কার্ডধারীরা চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) অনলাইনে কেনাকাটা করেছেন ১২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে লেনদেন হয়েছিল ৮ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৩ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা বা ৪০ দশমিক ২০ শতাংশ।

গত জানুয়ারি মাসে কার্ডের মাধ্যমে ই-কমার্সে রেকর্ড ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর আগে কখনো অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায় এত বেশি লেনদেন করেননি গ্রাহকরা। সরকারের বিভিন্ন আইনের কারণে এ খাতে মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে বলে মনে করছেন ই-ক্যাব নেতারা। এজন্য অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটা বাড়িয়েছেন মানুষ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ই-কমার্সে সরকারের বিশেষ নজরের কারণে প্রতারণা অনেকটাই কমে এসেছে। এ ছাড়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ নিজস্ব সেটেলমেন্ট হিসেবে নেওয়াসহ নানা নীতির কারণে এ খাতে মানুষের আস্থা ফিরছে। গ্রাহকদের আগ্রহ যদি বাড়তে থাকে, তাহলে এই খাত আরও বড় হবে বলে মনে করছেন তারা।

জানতে চাইলে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, গত কয়েক বছরে ই-কমার্সের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। পাশাপাশি সরকারের আইনের কারণে যেসব কোম্পানি বর্তমানে মার্কেটে কাজ করছে, তাদের কোয়ালিটি বেড়েছে। আগে অল্প কোম্পানি ছিল। এখন অনেক কোম্পানির কারণে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। গ্রাহকরাও ভালো এবং খারাপ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে পারছেন। এ ছাড়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নতুন সেবা যোগ করায় মানুষও অনলাইনে কেনাকাটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে আরও বিস্তার ঘটবে বলেও মনে করেন তিনি।

জানা যায়, মুন্সিব্জি ডটকমের হাত ধরে ২০০০ সালে দেশে ই-কমার্সের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা শহর থেকে গ্রামেও বিস্তৃত হলে ই-কমার্সের সম্প্রসারণ হয়। এ সময় সেলবাজার ডটকম, এখানেই ডটকমসহ বেশ কটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দেশে অনলাইন কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত হয়। কিন্তু ইন্টারনেটের গতি কম থাকাসহ নানা কারণে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০১২ সালে বিক্রয় ডটকম ও ২০১৪ সালে দারাজের মতো প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই দেশে ই-কমার্স ব্যবসা এগিয়ে যায়। বর্তমানে দেশে ই-ক্যাব সদস্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৬৬। এর বাইরে ফেসবুকভিত্তিক আরও কয়েক হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা অনলাইনে পণ্য লেনদেনের কাজ করছে।

২০২০ সালে কভিড-পরবর্তী সময়ে মানুষ বাধ্য হয়েই ই-কমার্সে ঝোঁকেন। এতে খাতটি জনপ্রিয় হতে শুরু করে। এ সময় ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, কিউকম, ধামাকা শপিং ও দালাল প্লাসের মতো প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক ডিসকাউন্টের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু করে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর কেনাকাটা বাড়ে কয়েকগুণ। আর এ সুযোগেই প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে। অধিক ক্রয়াদেশ নিলেও গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানগুলো। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার হস্তক্ষেপ করে। গ্রেপ্তার হতে থাকেন একে একে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত কর্তাব্যক্তিরা। আর জনপ্রিয়তা হারায় দেশের ই-কমার্স খাত।

২০২১ সালে ই-কমার্স খাতে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এলে এ খাতে গ্রাহকদের আস্থাহীনতা তৈরি হয়। অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অগ্রিম টাকা নিয়ে দীর্ঘদিনেও পণ্য বা সেবা সরবরাহ করছে না। এ নিয়ে নানা বিতর্কের মুখে ২০২১ সালের জুনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশিকা জারি করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই নির্দেশনার আলোকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ নিজস্ব সেটেলমেন্ট হিসেবে ধারণ করবে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহের পর দাম পাবে। লেনদেন নিষ্পত্তিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ব্যাংক, এমএফএস বা ই-ওয়ালেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারবে। যদিও অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এখনো এসব নির্দেশনা মানছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তাইওয়ান ইস্যুতে জাপানের বক্তব্য, পাল্টা অবস্থান চীনের

পানি কি সত্যিই ত্বক উজ্জ্বল করে

তিশার বিরুদ্ধে ভারতীয় প্রযোজকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

ভূমিকম্প / বুয়েট বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে ঢাবিতে হল পরিদর্শন শুরু

কংক্রিট নির্ভর উন্নয়ন ঢাকাকে অনিরাপদ করেছে : পরিবেশ উপদেষ্টা

সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য রুপালি বরখাস্ত, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ

মহাসড়কের পাশে মিলল কাপড়ে মোড়ানো নবজাতক 

ইউআইইউতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি এবং নিরসন বিষয়ক সেমিনার

বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের সেনা-বিজিপির ৫ সদস্য

হাওর থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

১০

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার অপহরণ মামলার আসামি সম্রাট

১১

স্মার্টফোন যেভাবে ভূমিকম্প শনাক্ত করে

১২

ছাত্রদলের ১ ইউনিটের কমিটি স্থগিত

১৩

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে নেবে ১ হাজার ১৫২ জন

১৪

এরিয়া সেলস ম্যানেজার পদে নিয়োগ দিচ্ছে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স

১৫

বাংলাদেশ সি-সুইট অ্যাওয়ার্ডসের ‘সিইও অব দ্য ইয়ার ২০২৫’ সিটি ব্যাংকের মাসরুর আরেফিন

১৬

ইসরায়েলসহ মিত্রদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি, ১৭ জনের মৃত্যুদণ্ড

১৭

জাতীয় ইমাম-খতিব সম্মেলনে চরমোনাই পীর / আলেমদেরকে ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহারের কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না

১৮

ইপিআই টিকাকেন্দ্রে আগুন

১৯

কৃষি ব্যাংক স্টাফ কলেজে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স অনুষ্ঠিত

২০
X