পাকিস্তানের প্রতিটি ইঞ্চি ভূমি ভারতের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ব্রহ্মসের আওতায় বলে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের হুঁশিয়ারির পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ভারতকে পারমাণবিক বোমার হুমকি দিয়েছেন। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির বলেন, দেশটি উসকানি দিলে পাকিস্তান পারমাণবিক বোমা ব্যবহারেও পিছপা হবে না। এর আগেও ইসলামাবাদ কয়েক দফায় এ হুমকি দিয়েছে। খবর ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেসের।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির বলেছেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রময় পরিবেশে যুদ্ধের কোনো স্থান নেই।’ একই সঙ্গে তিনি ভারতকে ইঙ্গিত করে সতর্ক করে দিয়েছেন, তার দেশ ‘উসকানিদাতাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাবে।’
অ্যাবোটাবাদের কাকুলে অবস্থিত পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে (পিএমএ) ক্যাডেটদের সঙ্গে ভাষণ দেওয়ার সময় মুনির ভারতকে মূল সমস্যাগুলো সমাধান করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কখনো কারও কটাক্ষে ভীত নই, কখনো বলপ্রয়োগেও ভয় পাই না। আমরা ন্যূনতম কোনো উসকানিতেও সিদ্ধান্তমূলকভাবে এবং অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাব। যে কোনো পরবর্তী উত্তেজনার দায়, যা শেষ পর্যন্ত পুরো অঞ্চলের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে—সম্পূর্ণভাবে ভারতের ওপরই থাকবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে মুনিরের এটি ভারতের প্রতি দ্বিতীয় পারমাণবিক হুমকি। গত আগস্টে ফ্লোরিডার টাম্পায় পাকিস্তানি প্রবাসীদের সঙ্গে এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি আমরা মনে করি, আমাদের কেউ আক্রমণ করবে, তবে আমরা বিশ্বের অর্ধেককে সঙ্গে নিয়ে যাব।’
কয়েক মাসের মধ্যে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান তিনবার সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেছেন। প্রথম সফর জুনে, অপারেশন সিঁদুরের কয়েক সপ্তাহ পরে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। দ্বিতীয় সফর আগস্টে, ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডারের বিদায়ী অনুষ্ঠানে। তৃতীয় সফর সেপ্টেম্বরে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে এবং ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।
গত শনিবার মুনির আরও বলেন, ‘যুদ্ধ ও যোগাযোগ ক্ষেত্রের মধ্যে পার্থক্য কমতে থাকায়, আমাদের অস্ত্রের পৌঁছানো ও বিধ্বংসী ক্ষমতা ভারতের ভৌগোলিক যুদ্ধক্ষেত্রের ভুল ধারণাকে চূর্ণ করে দেবে। শাস্তিমূলক সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি উসকানিদাতাদের কল্পনা ও হিসাবের সীমা ছাড়িয়ে যাবে।’
এর আগে উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌর সারোজিনি নগরে ব্রহ্মস মিসাইল উৎপাদন কারখানার প্রথম ব্যাচের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাজনাথ সিং বলেছেন, ‘অপারেশন সিঁদুরের সময় যা ঘটেছিল, তা ছিল ট্রেলার মাত্র। পাকিস্তানের প্রতি ইঞ্চি মাটি এখন ভারতের ব্রহ্মসের আওতায়।’
গত এপ্রিলে কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় মে মাসে ভারতের সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের ভেতরে একটি অভিযান চালায়। ওই অভিযানের নাম ছিল অপারেশন সিঁদুর। সেই অভিযানে ব্যবহৃত হয় দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ব্রহ্মস সুপারসনিক মিসাইল, যার গতি শব্দের তিন গুণ এবং নির্ভুলতা প্রায় শতভাগ। ওই অভিযানের জবাব দেয় পাকিস্তানও। চার দিনের যুদ্ধের পর দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে গেলেও বাকযুদ্ধ থামেনি।
এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, সীমান্তে কোনোরকম দুঃসাহস দেখালে তার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের ইতিহাস ও ভূগোল বদলে যেতে পারে। সেই রেশ কাটতে না কাটতে দেশটির সেনাবাহিনীর চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, পাকিস্তানের যে কোনো ধরনের পদক্ষেপের জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী আর সংযম দেখাবে না। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বলে, ভবিষ্যৎ ভারত-পাকিস্তান সংঘাত ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনবে। আর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, এবার ভারতকে তাদের যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষের নিচেই কবর দেওয়া হবে। পাল্টাপাল্টি এমন হুমকিতে আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ছে।
মন্তব্য করুন