বিশ্ববেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যুদ্ধবিরতিতে আশার চেয়ে আশঙ্কা কেন প্রবল

মিডল ইস্ট আইয়ের বিশ্লেষণ
যুদ্ধবিরতিতে আশার চেয়ে আশঙ্কা কেন প্রবল

‘তোমরা জানো আমরা ফিলিস্তিনিরা কেন বিখ্যাত? কারণ, তুমিই আমাদের শত্রু। আমাদের নিয়ে আগ্রহ আসলে তোমাদের ঘিরেই—ইহুদি ইস্যু ঘিরে। আগ্রহ আমাদের নয়, তোমাদের ঘিরে।’ এ কথাগুলো বলেছিলেন প্রখ্যাত ফিলিস্তিনি কবি ও লেখক মাহমুদ দারবিশ। তার ভাষায়, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, ইসরায়েল আমাদের শত্রু। তাদের পেছনে সীমাহীন সমর্থন আছে। আবার এটাও আমাদের সৌভাগ্য, কারণ ইহুদিরা সবসময় বিশ্ব নজর কাড়ে। তারা আমাদের পরাজয় দিয়েছে, আবার পরিচিতিও এনে দিয়েছে।’

এ কথাগুলো শুধু মন্তব্য নয়, বরং এক আয়না। ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি বাস্তবতা দেখার একটি দিক—নির্মম, বিপর্যয়কর এবং বারবার ফিরে আসা।

একদিকে, আমাদের ত্রাণবাহী ট্রাক লুট হয়, অন্যদিকে বিশ্ব মিডিয়ায় আমাদের জন্য বরাদ্দ কিছু মুহূর্ত। একদিকে, কোনো স্বীকৃতি নেই স্বাধীন রাষ্ট্রের, অন্যদিকে, এক অসম যুদ্ধের বাস্তবতা।

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সময়ও আমরা দেখেছি, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কনেসেটে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছেন—‘তিন হাজার বছরের সংঘাতের অবসান হয়েছে।’ কিন্তু ফিলিস্তিনিদের কাছে এ ঘোষণা যেন এক বিদ্রুপ। কারণ, গাজার ধ্বংসস্তূপে এখনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে মৃত শিশুদের দেহ।

এসব ঘোষণার পেছনে যা রয়ে যায়, তা হলো—একটি নির্মম হিসাব-নিকাশ। যে আলোচনায় নেই হামাস, নেই ইসরায়েলও। কিন্তু রয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং বেশ কিছু আরব ও ইসলামী রাষ্ট্র।

সম্প্রতি শারম আল-শেখে হওয়া সম্মেলনে স্পষ্ট হয়েছে—মূল আলোচনাগুলো এখন আর ফিলিস্তিনিদের হাতের নাগালে নেই। বরং তা নিয়ন্ত্রণ করছে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শক্তি এবং ওয়াশিংটন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ চুক্তিগুলো মূলত এক ধরনের ‘রিয়েল এস্টেট’ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তৈরি হচ্ছে। গাজার মানুষের ভাগ্যকে স্থায়ী শান্তির জায়গা নয়, বরং কৌশলগত সম্পত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর ঠিক এখানেই যুদ্ধবিরতির আশার চেয়ে শঙ্কা কেন প্রবল হয়ে উঠছে, তার উত্তর লুকিয়ে আছে।

কারণ, এখন স্পষ্ট—এই যুদ্ধ শুধু হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে নয়। বরং এটি একটি বৃহৎ আঞ্চলিক জোটের খেলা, যেখানে আরব ও ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরব রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা সহযোগিতা, এমনকি ইসরায়েলের সঙ্গে গোপন গোয়েন্দা বিনিময়—এই সবই প্রমাণ করে, গাজার বিপর্যয় আজ একটি বৃহৎ ভূরাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ।

গাজা যদি সত্যিই ‘হলোকাস্ট অব আওয়ার টাইম’ হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্ন উঠছে—এ সময়ে সবচেয়ে ভয়ংকর কী? গণহত্যা নিজে? না, ফিলিস্তিনি সমাজের ভেতরের বিভাজন, নেতৃত্বহীনতা আর ভবিষ্যৎহীনতা? দারবিশের কথায় যেন শেষবারের মতো নিজেরাই নিজেদের জিজ্ঞেস করি—এই যুদ্ধে আমরা কাকে হারাচ্ছি? আমাদের জমি? নাকি আমাদের আত্মপরিচয়?

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের দায় কেউই এড়াতে পারে না : ইএবি

ভোটের মাঠে ১ লাখ সেনা, দেড় লাখ পুলিশ থাকবে : ইসি সচিব

বড়দের আচরণে ক্ষতি হয় শিশুর

অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয় ও ড. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা ইনস্টিটিউটের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

জাতিসংঘকে একযোগে ইরান-রাশিয়া-চীনের বার্তা

অ্যাটলির নির্মাণে ববি-রণবীরের বাজিমাত

প্রকল্প সংস্কৃতি বিবিএসকে মূল কাজ থেকে বিচ্যুত করেছে: টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন

নির্বাচনে ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত

অযত্নে নষ্ট অর্ধকোটি টাকার নৌ অ্যাম্বুলেন্স

সুপেয় পানির সংকট মোকাবিলায় ট্যাংক বিতরণ

১০

নির্বাচন যত দেরিতে হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়বে : রাশেদ খান

১১

শিবালয়ে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে র‍্যালি ও জনসমাবেশ

১২

বিষাক্ত বাতাসে আচ্ছন্ন শহর, দূষণ ১৬ গুণ বেশি

১৩

‘শহীদ শামসুজ্জোহার চেতনাকে ধারণ করে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে চাই’

১৪

ফাঁদ পেতে অন্যকে ফাঁসাতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা

১৫

শিক্ষকদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ এ্যানির

১৬

শুঁটকি উপকারী না ক্ষতিকর? কী বলছেন পুষ্টিবিদ

১৭

ভারত / প্লেনের ভেতর যাত্রীর পাওয়ার ব্যাংকে হঠাৎ আগুন

১৮

বাংলাদেশের পর এবার স্কোয়াডে পরিবর্তন আনল ওয়েস্ট ইন্ডিজও

১৯

জুলাই আন্দোলনে শহীদরাও মুক্তিযোদ্ধা : রিজভী

২০
X