৮-১৪ জুন ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেক্সটাইল প্রযুক্তি প্রদর্শনী। আমন্ত্রণ পেয়ে সেখানে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের তিন শিক্ষার্থী। এর আগে তাদের টেক্সটাইল মেশিনারি ইনোভেশনভিত্তিক রিসার্চ পেপার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে হতে হয়েছিল সেরা। তাদের গল্পটা শোনাচ্ছেন মাহবুব আলম রিয়াজ।
ইতালির মিলানে টেক্সটাইল প্রযুক্তি প্রদর্শনী দেখার সুযোগ মিলেছে বিশ্বের নানা দেশের সহস্রাধিক টেক্সটাইল মেশিনারি প্রস্তুতকারী ও পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের। বাংলাদেশ থেকেও অনেক পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। নানা দেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়ারা গিয়েছিলেন আমন্ত্রণ পেয়ে। বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) তিন শিক্ষার্থী। তারা হলেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল মেশিনারি ডিজাইন ও মেইনটেনেন্স বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলাম, ফারিয়া তাসমিম মজুমদার ও অভিষেক দাশগুপ্ত।
অভিষেক বলেন, ‘এর আগে ২০১৯ সালে প্রদর্শনীটি হয়। তখন আমাদের দেশ আমন্ত্রণ পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে আমরাই প্রথম গেলাম।’
তিন শিক্ষার্থী বাছাইয়ে গত ৭ মার্চ একটি গবেষণা প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়। যেখানে টেক্সটাইল শিল্পে প্রযুক্তির গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রতিযোগিতায় অভিষেক দাশগুপ্ত দাখিল করেন দুটি প্রজেক্ট। প্রথমটিতে সেন্সরের মাধ্যমে টেক্সটাইল শিল্পের সার্কুলার নিটিং মেশিনের ভাইব্রেশনের পরিবর্তনের মাধ্যমে মেশিনের সমস্যা নির্ধারণের ব্যবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রজেক্টে একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে পানির অম্ল-ক্ষার সূচক, তাপমাত্রাসহ আরও অনেক কিছু নির্ণয় করতে পারে। অভিষেক বলেন, এটি এমন যন্ত্র যেখানে পানির অবস্থা ওয়েবসাইটে দেখাতে পারে। ফলাফল প্রয়োজনে মোবাইল ফোন কিংবা ইমেইলে বার্তা পাঠাতে পারে।
ফারিয়া তাসমিম মজুমদার যে প্রজেক্ট জমা দেন সেখানে একটি যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে যাতে বাতাসের বিভিন্ন স্থিতিমাপ ও গ্যাসীয় পদার্থের ঘনত্ব মাপতে পারে। সেইসঙ্গে সেসব মান ওয়েবসাইটে দেখাতে পারে।
মাইনুল ইসলামের দুটি প্রজেক্টের প্রথমটিতে ডাই বাথের অম্ল-ক্ষার সূচক নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণের মাধ্যমে। দ্বিতীয় প্রজেক্টে শব্দের তারতম্য নির্ণয়ের মাধ্যমে টেক্সটাইলে সার্কুলার নিটিং মেশিনের সমস্যা নিরূপণের জন্য যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে। প্রজেক্টের কাজে তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তারিক রেজা তোহা ও অনুপম মণ্ডল।
ইতালির উদ্দেশে তারা রওনা দেন ১০ জুন। সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল মেশিনারি ডিজাইন ও মেইনটেনেন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. গোলাম কিবরিয়া। যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার আয়োজন করে ইতালির ইটমা কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে ছিল ভ্রমণসঙ্গীও।
মাইনুল বলছিলেন, ‘আমাদের ডিপার্টমেন্টে যেহেতু মেশিনারি নিয়ে বেশি পড়ানো হয়, তাই এ নিয়ে আগ্রহ আগে থেকেই ছিল। এ সফরে গবেষণার যে বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে তার সঙ্গেও পরিচিত হওয়ার সুযোগ হলো। বিভিন্ন দেশের আবিষ্কৃত মেশিনে যেসব নতুনত্ব এসেছে, সেটাও দেখলাম।’
ফারিয়া বলেন, ‘সম্প্রতি যে মেশিন ও যন্ত্র বাজারে আসে তা দেখেছি। কোনটি কীভাবে কাজ করে জানলাম। এসব মেশিন ও যন্ত্র আমাদের দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে যুক্ত করা গেলে উৎপাদনও বাড়বে।’
তিনজন রাতে বের হন মিলান শহরে। কিছু কেনাকাটাও সারেন। রাতে যেখানে ছিলেন, তার আশপাশে ছিল বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাক প্রতিষ্ঠান। সেখানেও ঢু মারেন সবাই।
ফারিয়া বললেন, ‘ইতালি থেকে দেশে ফেরার পর ক্যাম্পাসের অনেকেই আমাদের অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছে। আড্ডাতেই সবাইকে টুকটাক বলেছি, কী দেখলাম, কী শিখলাম এসব।’
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের মতো ভারত, পাকিস্তান, মঙ্গোলিয়া, পেরু, ভিয়েতনাম থেকে তিনজন শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষকও আসেন। অভিষেক বলেন, ‘আমাদের দেশ থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান সেখানে স্টল দিয়েছে।’
১৯৫১ সালে ফ্রান্সে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটির প্রতি চার বছর পরপর হয়। এবার ইতালিতে হলো এর ১৯তম পর্ব। অংশগ্রহণ করছে ৪৭টি দেশের ১ হাজার ৭০৯টি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্ডাস্ট্রিতে ফিনিশিং, স্পিনিং, ওয়েভিং, প্রিন্টিং, নিটিং মেশিনারি প্রদর্শনের সুযোগ পায়।
মন্তব্য করুন