মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠিত হলে তিনি কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এমনকি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অথবা সরকারি কোনো পদ বা দায়িত্বেও তিনি থাকতে পারবেন না। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইন (আইসিটি) ১৯৭৩-এর তৃতীয় সংশোধনীতে এমন বিধান যুক্ত করে অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ এ সেকশন ২৩ যুক্ত করা হয়েছে। নতুন সংযোজিত ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই আইনের সেকশন ৯-এর ১-এর অধীনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (ফরমাল চার্জ) দাখিল হলে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা বহাল থাকার অযোগ্য হবেন।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘একইভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তি স্থানীয় সরকার পরিষদ বা প্রতিষ্ঠানের সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা বহাল থাকার অযোগ্য হবেন। এমনকি প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া বা অন্য কোনো সরকারি অফিসে অধিষ্ঠিত হওয়ারও অযোগ্য হবেন। তবে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক অভিযোগ থেকে অব্যাহতি বা খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ ধারা প্রযোজ্য হবে না মর্মে বিধানও সংযোজন করা হয়েছে।’
দুই নীতিমালা অনুমোদন: উপদেষ্টার পরিষদের বৈঠকে ‘বেসরকারি অংশগ্রহণে নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা ২০২৫’ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং পলিসি ২০২৫’ অনুমোদন মিলেছে। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এসব খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘নতুন এ নীতিমালার ফলে বিদ্যমান লাইসেন্সিং ব্যবস্থায় থাকা মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের পরিবর্তে নতুন একটি লাইসেন্সিং ব্যবস্থা; দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে মানসম্মত সেবার নিশ্চয়তা এবং প্রতিযোগিতামূলক টেলিযোগাযোগ ব্যবসা সম্প্রসারণ করে ভয়েস কল এবং ডাটা অর্থাৎ ইন্টারনেট এবং ডাটাকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে নিয়ে আসার একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সূচিত হয়েছে।’
নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে আইওএফের প্রতিক্রিয়া: এদিকে নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরস ফোরামের (আইওএফ) প্রেসিডেন্ট সিরাজ রব্বানী বলেন, নতুন নীতিমালার নামে এখনো এ খাতে সামান্য যেটুকু ব্যবসা দেশীয় বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে, সেটাও বিদেশিদের কাছে তুলে দেওয়ার আলামত লক্ষ করছি। এ খাতে এমনিতেই বিদেশি এমএনওর (মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর) নিরঙ্কুশ দাপট। নতুন নীতিমালার মাধ্যমে কার্যত তাদের আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। যেসব খাতে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সক্ষমতা রয়েছে, সেসব ব্যবসা বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, শুধু আইজিডব্লিউ খাতেই আমাদের ৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। অনেক দক্ষ প্রযুক্তিবিদ আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। এ পর্যন্ত আমরা বিটিআরসিকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছি। অথচ নতুন নীতিমালা কিংবা বিধি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে খুব একটা সমন্বয় করা হয় না। এটা খুবই অগ্রহণযোগ্য ও দুঃখজনক।
মন্তব্য করুন