ডাকসুতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচন করছেন কবি জসীমউদদীন হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ তানভীর বারী হামিম। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমজাদ হোসেন হৃদয়
ডাকসু নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে কি না—আপনার মূল্যায়ন কী?
তানভীর বারী হামিম: দেখুন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো নেই বললেই চলে। আমরা বারবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করছি; কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর দিনেই ব্যানার-ফেস্টুনে গোটা ক্যাম্পাস ভরে যায়, যা স্পষ্টভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন। এর পরও অনেক প্রার্থী নিজেদের মতো অনুষ্ঠান করছে। অভিযোগ জানিয়েও আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি। ফলে অংশগ্রহণমূলক ও সুন্দর ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে না। বারবার প্রশাসনকে বলছি; কিন্তু তারা কর্ণপাত করছেন না। বারবার বলা সত্ত্বেও প্রশাসন ‘দেখছি, দেখব’ বলে সময় কাটিয়ে দিচ্ছে।
অনেকে বলছেন, ছাত্রদল জয়ী হলে গণরুম-গেস্টরুম ফিরে আসবে—এ বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?
তানভীর বারী হামিম: যারা আগে গণরুম-গেস্টরুম
চালু করেছিল, তারাই এখন বড় বড় কথা বলছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কখনো এসবের সুবিধাভোগী হয়নি; বরং নির্যাতিত হয়েছে। আর যারা আজ সমালোচনা করছে, তাদেরই ইতিহাস আছে এ ফ্যাসিবাদী প্রথা চালুর সঙ্গে জড়িত থাকার। ছাত্রদল এ অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে। আমাদের ইশতেহারেও এসবের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
ডাকসু নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করেন?
তানভীর বারী হামিম: ডাকসু হলো গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার প্রথম ধাপ, আর জাতীয় নির্বাচন হলো চূড়ান্ত ধাপ। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে তরুণ প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। ডাকসু নির্বাচনে যদি তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তবে গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। আগে দেখতাম, জাতীয় নির্বাচনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ষড়যন্ত্র থাকে। কেন যেন মনে হচ্ছে, ডাকসু নির্বাচন কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ডাকসু নির্বাচন যদি সুষ্ঠুভাবে হয়, জাতীয় নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে হবে। কিন্তু একটি পক্ষ ডাকসু নির্বাচন প্রলম্বিত করে জাতীয় নির্বাচনকেও বাধাগ্রস্ত করতে চায়। ডাকসু ও জাতীয়—দুটি নির্বাচনই যথাসময়ে হওয়া উচিত। তা না হলে যারা পেছাতে চাইবে, তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লাল কার্ড দেখাবেন।
কালবেলা: বিভিন্ন প্যানেলের নারী প্রার্থীরা হ্যারাসমেন্টের শিকার হচ্ছেন। নারীদের নিরাপত্তার জন্য আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
তানভীর বারী হামিম: আমাদের নারী শিক্ষার্থীরা হ্যারাসমেন্টের শিকার হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন গ্রুপে জানায়। এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেওয়া সম্ভব হয় না। ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল নির্বাচিত হলে ডাকসুর সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে হেল্পলাইন চালু করব। যার মাধ্যমে আমাদের কোনো শিক্ষার্থী ঢাকাসহ দেশের যে কোনো স্থানে সমস্যার সম্মুখীন হলে সেখানে কল করে প্রতিকার পেতে পারবেন।
কালবেলা: আপনাদের প্যানেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে কতটা সাড়া ফেলেছে?
তানভীর বারী হামিম: আমাদের প্যানেল ঘোষণার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখেছি। প্রকৃত অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল বলতে যা বোঝায়, সেটিই আমরা গড়েছি। এখানে চাকমা প্রতিনিধি আছেন, সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রতিনিধি আছেন, নারী শিক্ষার্থী, ক্রীড়াবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, এমনকি একজন জুলাই শহীদ পরিবারের সন্তানও আছেন। বৈচিত্র্যের মেলবন্ধনই আমাদের শক্তি। শিক্ষার্থীরা এটি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছে। তাই আমরা আশাবাদী যে, ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে জয়লাভ করব, ইনশাআল্লাহ।
কালবেলা: নির্বাচনে জয়ী হলে আপনার প্রধান লক্ষ্য বা কাজ কী থাকবে?
তানভীর বারী হামিম: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে ছিলাম। শিক্ষার্থীদের জন্যই রাজনীতি করেছি। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সর্বদা সরব ছিলাম। এমন কোনো আন্দোলন ছিল না, যেখানে আমি অনুপস্থিত ছিলাম। ৫ আগস্টের পরও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতি করেছি, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করেছি। আমি জিএস পদে নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার আদায়ে কাজ করব। তারা যেন শিক্ষাজীবনে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ পায়, তা আমি নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তুলব। ক্যাম্পাসকে পরিপূর্ণভাবে নারীবান্ধব করার জন্য কাজ করব। আমি এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চাই, যেখানে নারী শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারবে।
কালবেলা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
তানভীর বারী হামিম: আপনাকেও এবং কালবেলাকেও ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন