আলী ইব্রাহিম
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চার বছরে ২৫ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে একমি পেস্টিসাইডস

অভ্যন্তরীণ তদন্তে উৎসে কর প্রদানের নথি মেলেনি
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড গত চার করবর্ষে সরবরাহকারীদের অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের উৎসে কর পরিশোধ করেনি। তবে কর পরিশোধ না করলেও প্রতিষ্ঠানটিকে উৎসে কর প্রদানের সনদ ঠিকই দিয়ে আসছে কর অঞ্চল-১-এর একটি সিন্ডিকেট। এতে প্রায় ২৫ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। শুধু সরবরাহকারীদের অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রেই নয়, সম্পদ কেনার ক্ষেত্রেও কোম্পানিটি উৎসে কর ফাঁকি দিয়েছে বলেও উঠে এসেছে প্রাথমিক তদন্তে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আয়কর খাতের রাজস্ব আহরণের সিংহভাগ আসে উৎসে কর থেকে। কোম্পানির সরবরাহ থেকে শুরু করে প্রচার-প্রচারণা এমনকি সম্পদ কেনার ক্ষেত্রে উৎসে কর নির্ধারণ করা আছে আয়কর আইনে। আর আইন অনুযায়ী উৎসে কর আদায় করেন আয়কর কর্মকর্তারা। কর অঞ্চল-১-এর একটি সার্কেলে এই উৎসে করে ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। কোম্পানি আর অসাধু আয়কর কর্মকর্তারা মিলে বছরের পর বছর ধরে জালিয়াতি করে আসছেন। এরই মধ্যে একমি পেস্টিসাইডসের এই কর ফাঁকির চিত্র উঠে এসেছে কর অঞ্চল-১-এর এক অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায়। এতে কোম্পানির আয়কর ফাঁকির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় একমি পেস্টিসাইডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন কর অঞ্চল-১-এর কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে একমি পেস্টিসাইডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা-উর রহমান সিনহার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তার মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

একমি পেস্টিসাইডসের আয়কর রিটার্নে উল্লিখিত তথ্যের বরাত দিয়ে সূত্র জানায়, কোম্পানিটি ২০২০-২১ করবর্ষে সাপ্লায়ারদের পেমেন্ট করেছে ১০২ কোটি ৫৪ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৭ টাকা। একই সময়ে কর্মচারীদের বেতন বাবদ দিয়েছে ১২ কোটি ৯১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৫ টাকা। একই করবর্ষে অন্যান্য খাতে পেমেন্টের পরিমাণ উল্লেখ করেছে ৯ কোটি ৩২ লাখ ৮ হাজার ৫৬৯ টাকা। একইভাবে ২০২১-২২ করবর্ষে সাপ্লায়ারদের অর্থ পরিশোধের পরিমাণ রিটার্নে উল্লেখ করেছে ১১২ কোটি ৪২ লাখ ৯৮ হাজার ২৫৭ টাকা। আলোচ্য সময়ে কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করেছে ১৪ কোটি ২৯ লাখ ২৪ হাজার ৩২৮ টাকা। আর অন্যান্য খাতে অর্থ পরিশোধের পরিমাণ দেখিয়েছে ৯ কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার ১১৬ টাকা। ২০২২-২৩ করবর্ষে একমি পেস্টিসাইডস সাপ্লায়ারদের অর্থ পরিশোধের পরিমাণ রিটার্নে উল্লেখ করেছে ১১১ কোটি ১২ লাখ ২৮ হাজার ৭৭০ টাকা। কর্মচারীদের বেতন বাবদ রিটার্নে প্রদর্শন করেছে ১৪ কোটি ৫৫ লাখ ২৯ লাখ ৬৩৮ টাকা এবং অন্যান্য পেমেন্ট হিসেবে দেখানো হয়েছে ৯ কোটি ৫৪ লাখ ৮১ হাজার ৫২১ টাকা। একইভাবে ২০২৩-২৪ করবর্ষের রিটার্নে সাপ্লায়ারদের পেমেন্ট উল্লেখ করেছে ১০২ কোটি ৭৬ লাখ ৪ হাজার ৮৫৬ টাকা। একই সময়ে কর্মচারীদের বেতন হিসেবে রিটার্নে কোম্পানিটি প্রদর্শন করেছে ৯ কোটি ৫ লাখ ৬৬ হাজার ১৬২ টাকা এবং অন্যান্য পেমেন্ট হিসেবে অর্থ পরিশোধের পরিমাণ দেখিয়েছে ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৭১ হাজার ৮৯৬ টাকা। অর্থাৎ চার করবর্ষে একমি পেস্টিসাইজ সাপ্লায়ারদের পরিশোধ করেছে ৪২৮ কোটি ৮৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮২০ টাকা। আর বেতন বাবদ পরিশোধ করেছে ৫০ কোটি ৮১ লাখ ৯৬ হাজার ১৭৩ টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৩২ কোটি ৯৩ লাখ ৭২ হাজার ১০২ টাকা খরচ করেছে। এতে গত চার করবর্ষে একমি পেস্টিসাইডস সরবরাহে মোট ৫১২ কোটি ৬১ লাখ ১৫ হাজার ৯৫ টাকা খরচ করেছে বলে রিটার্নে উল্লেখ করলেও এর বিপরীতে উৎসে পর প্রদানের পক্ষে কোনো চালান সংশ্লিষ্ট কর সার্কেলে জমা দেয়নি। আলোচ্য করবর্ষে সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর নির্ধারণ করা ছিল ৫ শতাংশ। আর সেই হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ২৫ কোটি টাকার বেশি কর ফাঁকি প্রমাণিত হয়েছে বলেও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেছে কর অঞ্চল-১।

শুধু ব্যয়ের ক্ষেত্রেই নয়, সম্পদ কেনার ক্ষেত্রেও কোম্পানিটির উৎসে কর না দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন কর কর্মকর্তারা। আলোচ্য সময়ে একমি পেস্টিসাইজ ৭৪ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার ৬২ টাকার সম্পদ ক্রয় করলেও উৎসে কর দেয়নি। এ ছাড়া বর্তমানে কোম্পানির কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

কর অঞ্চল-১-এর সংশ্লিষ্ট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-কর কমিশনার মো. তারিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘এই কর অঞ্চলে মাত্র বদলি হয়ে এসেছি। তবে বিষয়টি নিয়ে কার্যক্রম চলছে। পুরো বিষয়টি অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে হচ্ছে।’

এদিকে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা গেছে, একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেডের প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে অনিয়ম হওয়ায় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের পাঁচজনসহ মোট ১৪ ব্যক্তি ও ছয়টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এ-সংক্রান্ত অনুসন্ধান প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। ওই চার বিনিয়োগকারীর মধ্যে তিন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে একমি পেস্টিসাইডস কোম্পানির সংশ্লিষ্টরা শেয়ার ইস্যুর শর্তে ১৪ কোটি টাকা নিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে একমি পেস্টিসাইডসের ব্যাংক হিসাব এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রেজা-উর-রহমান সিনহা ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) সেলিম রেজাকে সরাসরি এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে চেকে ও নগদে ওই অর্থ দিয়েছেন তিন বিনিয়োগকারী। যার বিপরীতে তাদের নামে ১ কোটি ১৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩২৯টি (বোনাস শেয়ারসহ) শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে। ওই সময় উল্লিখিত শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১১ কোটি ৩৯ লাখ ৪৩ হাজার ২৯০ টাকা। অর্থাৎ, তখন কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা তাদের থেকে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা অতিরিক্ত নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সবাইকে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব: নীরব

‘হামজা আমার দলে হলে বেঞ্চেই বসে থাকত’

লন্ডনে টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়রের সঙ্গে বাসস চেয়ারম্যানের মতবিনিময়

আফগানদের কাছে হারার পর যা বললেন মিরাজ

অল্প পুঁজি নিয়ে আফগানদের সাথে পারল না বাংলাদেশ

‘দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রবীণদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে’

রাবেতাতুল ওয়ায়েজীনের সঙ্গে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের মতবিনিময়

ডিএনসিসি এলাকায় টাইফয়েডের টিকা পাবে ১৩ লাখ শিশু

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৯ কোটি ডলার

৭ বছর পর শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারত করলেন খালেদা জিয়া

১০

ফার্মগেটে ককটেল বিস্ফোরণ

১১

কালবেলার সংবাদের পর স্বপ্নের রঙিন ঘরে শাহারবানু

১২

আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিতে কাজ করছে জামায়াত : মুজিবুর রহমান

১৩

রাজধানীতে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারের রেকর্ডেড ভিডিও প্রদর্শন

১৪

জবাব দিতে পিএসসিকে আলটিমেটাম

১৫

অসদাচরণের অভিযোগে বদলি চিকিৎসক দম্পতি

১৬

সড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ

১৭

শহীদ জিয়ার মাজারে দোয়া করলেন খালেদা জিয়া

১৮

নোয়াখালী বিভাগ চাইলেন ‘কাবিলা’

১৯

বেথ মুনির রেকর্ডে অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত জয়

২০
X