শুক্রবার, ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১৪ ভাদ্র ১৪৩২
খন্দকার বদিউজ্জামান বুলবুল
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৭ এএম
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৩৯ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চারদিক

কবে দূর হবে সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা

কবে দূর হবে সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা

মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম চিকিৎসা। কথায় আছে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধিতে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা অপরিহার্য। সুস্থ ব্যক্তি মানেই সে কর্মঠ। আর কর্মঠ ব্যক্তি মাত্রই চেষ্টার মাধ্যমে নিজ ভাগ্য তথা জাতীয় সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই সেদিক থেকে একজন নাগরিকের সুস্থ থাকা প্রয়োজন। সুস্থতার জন্য যেমন প্রয়োজন সুষম খাবার; ঠিক তেমনি অসুস্থ হলে প্রয়োজন যথাযথ চিকিৎসা। আর এ চিকিৎসা অধিকাংশ নির্ভরশীল হাসপাতাল-ক্লিনিকের ওপর। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সরকারি হাসপাতাল। প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে যে কোনো জটিল ও কঠিন চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালগুলো প্রদান করে থাকে। সাধারণত বাংলাদেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী সরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর বেশি নির্ভরশীল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সরকারি হাসপাতালে দৈনিক অন্তত দশ লাখ মানুষ বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র মূল্যের বিনিময়ে চিকিৎসাসেবা নিতে আসে।

বলা হয়, এত এত মানুষের চাহিদা পূরণে আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলো কতটা প্রস্তুত বা কার্যকর? স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অতিক্রান্ত হলেও সরকারি হাসপাতালগুলোর অনিয়ম পিছু ছাড়েনি। নানাবিধ অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্যে এবং দুর্নীতিতে সয়লাব হাসপাতালগুলো। বিশেষ করে ওষুধ সংকট যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে প্রয়োজনের মাত্র ১ দশমিক ৬২ শতাংশ ওষুধ পায় রোগী। আর অধিকাংশ ও দামি ওষুধ অনেক সময় বাইরে থেকে কিনতে হয়। ফলে রোগীদের চিকিৎসা খরচ বেড়ে যায়। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষজন যেখানে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছে; সেখানে বাড়তি দামে বাইরে থেকে ওষুধ ক্রয় হতাশাজনক। এত গেল ওষুধ সংকট; এ ছাড়া হাসপাতালগুলোয় সচল উন্নতমানের যন্ত্রের রয়েছে অভাব। এক্স-রে মেশিন, এমআরআই, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রের অপ্রতুলতা রয়েছে। আবার অনেক সময় হাসপাতালে কিছু কিছু যন্ত্র থাকলেও দক্ষ লোকের অভাবে যন্ত্রগুলো অনেক সময় অব্যবহিত অবস্থায় থাকতে থাকতে বিকল হয়ে যায়। ফলে হাসপাতালে পরীক্ষা করতে না পেরে, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ক্লিনিকগুলোতে যাতায়াত করতে হয় রোগীদের। এ সময় ক্লিনিকগুলো পকেট কাটে সাধারণ রোগীদের। ক্ষেত্রবিশেষে অনেকেই চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে অপারগ হয়ে পড়ে। সহায়-সম্বল বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়ে যায় অনেকেই; যা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। যেনতেন কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অহরহ অন্যত্র রেফার্ড করার ঘটনা ঘটছে। এতে অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সাধারণ রোগীদের। আবার অনেক রোগী মারা যায় শুধু ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসায় অবহেলার কারণে—এমন অভিযোগ কম নেই। এ ছাড়া ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও টেকনিশিয়ানসহ নানা পদে লোকবল সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা পেতে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয় রোগীদের। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সংশ্লিষ্টদের গড়িমসি ভাব স্বাস্থ্য খাতে নৈরাজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে ডাক্তার না আসা, নার্সদের সেবা প্রদানে গড়িমসি, ওয়ার্ড বয়দের ঠিকমতো কাজ না করা, নিম্নমানের খাবার পরিবেশ করাসহ হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সেইসঙ্গে রয়েছে দালালের দৌরাত্ম্যে। হাসপাতালের মূল ফটক থেকে শুরু করে কেবিন পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে একশ্রেণির দালাল। এরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে রোগীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের আনাগোনা এবং ডাক্তারদের বিভিন্ন উপহার-উপঢৌকন প্রদানের মাধ্যমে নিজ কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিপিবদ্ধ করানোর মতো অনিয়ম হাসপাতালে অহরহ দেখা যায়। সরকারি হাসপাতালগুলোর প্রতিনিয়ত অব্যবস্থার কারণে প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয় সেবাপ্রত্যাশীরা।

প্রত্যেক নাগরিকের যথাযথ চিকিৎসাসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু দেশে যথাযথ চিকিৎসাসেবা পাওয়া যেন সোনার হরিণ পাওয়া। স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধি, শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত বিশেষ করে সরকারি পর্যায়ে নার্স, ডাক্তার ও কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল হওয়ার পাশাপাশি তাদের কাজকর্মের জবাবদিহি নিশ্চিত করার চর্চা তৈরি করতে হবে। সেইসঙ্গে হাসপাতালের যে কোনো অনিয়ম বা নৈরাজ্য রোধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশে উন্নতমানের চিকিৎসা প্রদানে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সেবার মান বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টাসহ বিদ্যমান সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার বিকল্প নেই।

খন্দকার বদিউজ্জামান বুলবুল, শিক্ষার্থী

আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে নারীদের জন্য বিশেষ কোটা বাতিল 

আন্তর্জাতিক ফেলোশিপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন ছাত্রদলের ঊর্মি

স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের মায়ের মৃত্যুতে প্রেস ক্লাবের শোক

প্রকৌশলীদের মর্যাদা রক্ষায় আইইবি’র ৫ দফা দাবি

পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাই

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের লিগপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত, রিয়াল-বার্সার প্রতিপক্ষ কারা?

সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিওটি ভুয়া

আজীবন থাকা, কাজ ও ব্যবসার সুযোগ দেবে সৌদি, কত টাকা লাগবে

ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

১০

এবার যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের 

১১

ফিফা কোয়ালিফায়ারে শেষবারের মতো নামছেন মেসি, জানালেন নিজেই

১২

অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে রেখে স্বাস্থ্যকর্মীর টিকটক, অতঃপর...

১৩

গকসু নির্বাচন : রেকর্ডসংখ্যক মনোনয়ন বিতরণ 

১৪

চট্টগ্রামে হবে আইইসিসি মাল্টিডেস্টিনেশন এডুকেশন এক্সপো 

১৫

চব্বিশের বিজয়ীদের কার্যকলাপে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ : কাদের সিদ্দিকী

১৬

ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে হামলার আশঙ্কা নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৭

প্যানেলে তন্বির জন্য পদ শূন্য রাখলেও একই পদে লড়ছেন বাগছাসের এক নেতা

১৮

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ দুই ম্যাচের জন্য আর্জেন্টিনা দল ঘোষণা

১৯

আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নতুন রাজনৈতিক জোট

২০
X