বর্তমান প্রজন্মের এক নতুন আতঙ্ক যেন মোবাইল ফোন। ইন্টারনেটের সুবাদে এখন ঘরে বসেই তথ্য আদান-প্রদান চলছে। বিশ্ব একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। সবকিছু হাতের মুঠোয়। কিন্তু এসব কিছুর ভিড়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল আমাদের বিবেক ও মনুষ্যত্ব। আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি চর্চা, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ, আদর্শ জীবনাচার, সুস্থ বিনোদন চর্চা, পারিবারিক রক্ষণশীলতা এসবের কোনোকিছুই যেন টিকে নেই বর্তমানে। বলা হয়ে থাকে, ‘স্বাধীনতা আর ধ্বংসের মাঝে খুব বেশি পার্থক্য নেই। যখন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি স্বাধীন মনে হবে তখনই ধ্বংসের পথে যাত্রা শুরু করবে।’ আমরা বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে এমনই উত্তর পাই। এখানে সবাই স্বাধীন। কিন্তু কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এই স্বাধীনতার অপব্যবহার হচ্ছে সর্বত্র। এসবের অন্যতম ও প্রধান কারণ হিসেবে আমরা দেখতে পাই অভিভাবকদের অসচেতনতা ও দায়িত্বে অবহেলা।
আমাদের এখনই তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে হবে। অভিভাবকদের সঠিক প্যারেন্টিং করতে হবে। কেননা কর্মব্যস্ততার এ যান্ত্রিক পৃথিবীতে সন্তানদের সময় দিতে না পারাই যেন কাল হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মা-বাবাকেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ সঠিক দিকনির্দেশনা না পেলে নানামুখী সংকট তৈরি হতে পারে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে ধর্মীয় অনুশাসন পালনে উৎসাহ বাড়াতে হবে। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি শিশুকে সৃজনশীল কাজে অনুপ্রাণিত করতে হবে। ছবি আঁকা, আবৃত্তি, বাগান করা, পরিবারের সবার সঙ্গে গল্প করা ইত্যাদি কাজে তাদের ব্যস্ত রাখা হতে পারে দারুণ সহায়ক। ছোট-বড় সব কাজে শিশুদের উৎসাহী করতে হবে। তাদের চাহিদা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। ছোট থেকেই দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। ভালো-খারাপের পার্থক্য বুঝিয়ে বলতে হবে তাদের।
সামাজিক অপরাধ কমাতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো—সুস্থ বিনোদন চর্চা। বর্তমানে এর অভাব প্রচুর। পূর্বে মা-বাবা পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে বসে নাটক, সিনেমা, সংবাদ, শিক্ষণীয় গল্প, কার্টুন বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতেন। এসব নিয়ে আলোচনা, মতবিনিময় করতেন। ফলে পারিবারিক সংহতি ও বন্ধন দৃঢ় হতো। কিন্তু বর্তমানে অসুস্থ ও বিকৃত মানসিকতার টিভি সিরিজ, ওয়েব ফিল্ম, নিম্নমানের কনটেন্ট, ভাইরাল হওয়ার নেশা, মাদকাসক্ত হওয়া, সস্তামানের বই এ পরিবেশকে জটিল করে তুলেছে। এসব থেকে তরুণরা কোনোভাবে উপকৃত হচ্ছে না; বরং তাদের মাঝে নেতিবাচক ধ্যানধারণা তৈরি হচ্ছে। এর ফলে তারা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। একটি সভ্য ও সুন্দর জাতি বিনির্মাণে নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি সুস্থ বিনোদনের বিকল্প নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। তারাই দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরবে। সুতরাং তাদের সুস্থ পরিবেশের মধ্যে বিকশিত করার মধ্য দিয়েই সমাজে অপরাধ রুখতে ভূমিকা রাখতে পারে। সুস্থ বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চাই পারে সেই পরিবেশ তৈরি করতে।
তানজিনা আক্তার
শিক্ষার্থী, অনার্স চতুর্থ বর্ষ, বাংলা বিভাগ
চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ
মন্তব্য করুন