নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে ‘আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা’র সংজ্ঞায় ‘সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী’ যুক্ত করার প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইনে এটি যুক্ত হলে তিন বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবেন। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সশস্ত্র বাহিনীকে সংজ্ঞাভুক্ত করা ছাড়াও কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা রাখা, ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের শাস্তির বিধান স্পষ্ট করা, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার সম্পর্কিত সব বিধান বাদ দেওয়াসহ আরও কিছু প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বর্তমান সরকারের আমলে গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন আবার ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে। নির্বাচন কমিশন তাদের প্রস্তাবে আংশিকভাবে ‘না’ ভোট ফিরিয়ে আনার কথা বলেছে, সার্বিকভাবে নয়। ‘না’ ভোটের বিধানটা হবে যদি কোথাও একক প্রার্থী হন, তবে তিনি বিনা ভোটে নির্বাচিত হবেন না। তার বিপক্ষে ‘না’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাংলাদেশের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এ টি এম শামসুল হুদার নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে ‘না’ ভোটের বিধান চালু করেছিল। এ বিধান অনুযায়ী ব্যালট পেপারের সবশেষ প্রার্থীর স্থানে ছিল লেখা থাকে ‘ওপরের কাউকে নয়’ এবং ভোটারদের সহজ পরিচিতির জন্য মার্কা রাখা হয় ‘ক্রস’। তখন সারা দেশে মোট প্রদত্ত ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৯ হাজার ২১০ ভোটের মধ্যে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৩৭টি ‘না’ ভোট পড়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ‘না’ ভোটের বিধান বাদ দেওয়া হয়।
আরপিও সংশোধনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন সাধারণত একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে। তারপর আইন মন্ত্রণালয় তা যাচাই-বাছাই করে। পরে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রিসভা অনুমোদন করার পর সংসদে বিল তোলা হয়। তবে সবসময় নির্বাচন কমিশন যেভাবে প্রস্তাব করে, সেভাবে আইন পাস হয় না। মন্ত্রিসভা বা সংসদ এখানে সংযোজন-বিয়োজন করতে পারে। এখন সংসদ না থাকায় নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব যাবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে। কতটুকু সংশোধনী আসবে, তা মূলত নির্ভর করবে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। এগুলো আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করার পর।
নির্বাচন কমিশন আশা করছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে আরপিও সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিতে পারবে। এ ছাড়া ঐকমত্য কমিশনের কোনো সিদ্ধান্ত এলে এবং নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করা হলে, সেটা সংশোধনীর জন্য উপস্থাপন করা হবে।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো রেখে নির্বাচন করতে হলে সেনাবাহিনীর বৃহত্তর ও কার্যকর অংশগ্রহণ দরকার। দেশে এখন পুলিশের সাংগঠনিক ক্ষমতা ও মনোবল নিম্নপর্যায়ে। এমন অবস্থায় ভালো নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবয়ব, আয়তন ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী এখন মাঠে আছে সেই লক্ষ্যেরই একটি স্বীকৃতি হিসেবে।
আমরা সবাই জানি, গত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের প্রত্যাশা, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচনী সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
মন্তব্য করুন