দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে, ততই নির্বাচনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা ঘনীভূত হচ্ছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সীমানা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চূড়ান্ত তালিকায় ৩০০ আসনের বিদ্যমান সীমানার মধ্যে ৪৬টিতে রদবদল করা হয়েছে। যদিও ইসির খসড়া তালিকায় ৩৯টি আসনে ছোটখাটো রদবদল আনা হয়েছিল। এ নিয়ে আপত্তি ও ক্ষোভ-বিক্ষোভ এলেও বেশিরভাগ আসনে বিক্ষুব্ধদের আপত্তি আমলে নেয়নি ইসি। চূড়ান্ত হওয়া এ সীমানায় আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময় পর্যন্ত পাওয়া দাবি, আপত্তি ও সুপারিশ এবং মতামতের ওপর কমিশন প্রকাশ্য শুনানি করে। পরে তথ্য ও যুক্তিতর্ক বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হলো। এর মাধ্যম নির্বাচন-সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন আবারও সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠিত হলে তিনি কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এমনকি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অথবা সরকারি কোনো পদ বা দায়িত্বেও তিনি থাকতে পারবেন না। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইন (আইসিটি) ১৯৭৩-এর তৃতীয় সংশোধনীতে এমন বিধান যুক্ত করে অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ এ সেকশন ২৩ যুক্ত করা হয়েছে। নতুন সংযোজিত ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই আইনের সেকশন ৯-এর ১-এর অধীনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (ফরমাল চার্জ) দাখিল হলে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা বহাল থাকার অযোগ্য হবেন। একইভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তি স্থানীয় সরকার পরিষদ বা প্রতিষ্ঠানের সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা বহাল থাকার অযোগ্য হবেন। এমনকি প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া বা অন্য কোনো সরকারি অফিসে অধিষ্ঠিত হওয়ারও অযোগ্য হবেন। তবে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক অভিযোগ থেকে অব্যাহতি বা খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ ধারা প্রযোজ্য হবে না মর্মে বিধানও সংযোজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি কমাতে বরাবরই বিদেশিরা নানারকম কথাবার্তা বলে আসছেন। এ ধারা এখনো অব্যাহত আছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতি ও জনগণের মৌলিক অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুর্নীতি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি ঘটায় না, বরং গণতন্ত্রের ভিত্তি নড়বড়ে করে তোলে।
আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়, তা শুধু অঙ্কের হিসাব দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়, এই অর্থ দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না হওয়ায় জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে দুর্নীতি দমনে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত হয়নি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা। এর ব্যত্যয় ঘটলে কোনো সংস্কার উদ্যোগই টেকসই হবে না। আমাদের প্রত্যাশা, নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
মন্তব্য করুন