ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে নতুন করে স্বীকৃতি দেওয়া পশ্চিমা দেশের তালিকা ক্রমেই বড় হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে গত রোববার। এখন এ পথে হাঁটছে ফ্রান্সসহ ইসরায়েলের আরও কয়েকটি মিত্রদেশ। গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলমান ইসরায়েলের জাতিগত নিধনের মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে এসব প্রভাবশালী দেশের স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এ স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে। স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। যথারীতি তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল।
চারটি দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দাবি আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনি মুক্তি-সংগ্রামের নেতা ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে এ নিয়ে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের ১৫১টি তাদের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির উদ্যোগ আরও আছে। এমন পদক্ষেপের পরও ফিলিস্তিনের গাজায় থামছে না জাতিগত নিধন। সোমবারও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ৩৭ ফিলিস্তিনি।
তাহলে প্রভাবশালী দেশগুলোর স্বীকৃতি পেয়ে লাভটা হচ্ছে কী! গণহত্যা থামানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে অনাহারে অপুষ্টিতে ফিলিস্তিনি শিশুদের নির্মম মৃত্যুও রোধ করা যাচ্ছে না। এসব স্বীকৃতি যেন ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন দেশে মরার স্বীকৃতি। প্রভাবশালী দেশগুলোর স্বীকৃতির পাশাপাশি ফিলিস্তিনে গণহত্যা অব্যাহত থাকায় তারাপদ রায়ের ‘দারিদ্র্য রেখা’ কবিতাটির মর্মার্থের সঙ্গে বেশ মিল আছে। কবিতাটি অংশবিশেষ নিম্নরূপ—
আমি নিতান্ত গরীব ছিলাম, খুবই গরীব।/ আমার ক্ষুধার অন্ন ছিল না,/ আমার লজ্জা নিবারণের কাপড় ছিল না,
আমার মাথার উপরে আচ্ছাদন ছিল না।/ অসীম দয়ার শরীর আপনার,/আপনি এসে আমাকে বললেন,/ না, গরীব কথাটা খুব খারাপ,/ ওতে মানুষের মর্যাদা হানি হয়,/ তুমি আসলে দরিদ্র।/ অপরিসীম দারিদ্র্যের মধ্যে আমার কষ্টের দিন,/ আমার কষ্টের দিন, দিনের পর দিন আর শেষ হয় না,/ আমি আরো জীর্ণ আরো ক্লিষ্ট হয়ে গেলাম।/ হঠাৎ আপনি আবার এলেন, এসে বললেন,/ দ্যাখো, বিবেচনা করে দেখলাম,/ দরিদ্র শব্দটিও ভালো নয়, তুমি হলে নিঃস্ব।/ দীর্ঘ নিঃস্বতায় আমার দিন রাত্রি,/ গনগনে গরমে ধুঁকতে ধুঁকতে,/ শীতের রাতের ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে,
বর্ষার জলে ভিজতে ভিজতে,/ আমি নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়ে গেলাম।/ আপনার কিন্তু ক্লান্তি নেই,/ আপনি আবার এলেন, আপনি বললেন,/ তোমার নিঃস্বতার কোনো মানে হয় না,/ তুমি নিঃস্ব হবে কেন,/ তোমাকে চিরকাল শুধু বঞ্চনা করা হয়েছে,/ তুমি বঞ্চিত, তুমি চিরবঞ্চিত।/ আমার বঞ্চনার অবসান নেই,/ বছরের পর বছর আধপেটা খেয়ে,
উদোম আকাশের নিচে রাস্তায় শুয়ে,/ কঙ্কালসার আমার বেঁচে থাকা।/ কিন্তু আপনি আমাকে ভোলেননি,/ এবার আপনার মুষ্টিবদ্ধ হাত,/ আপনি এসে উদাত্ত কণ্ঠে ডাক দিলেন,/ জাগো, জাগো সর্বহারা।/ তখন আর আমার জাগবার ক্ষমতা নেই,/ ক্ষুধায় অনাহারে আমি শেষ হয়ে এসেছি,/ আমার বুকের পাঁজর হাঁপরের মতো ওঠানামা করছে,/ আপনার উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে/ আমি তাল মেলাতে পারছি না।
ইসরায়েলের আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিরা এখন বিপন্ন। তাই শুধু স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াটাই শেষ কথা নয়। মানবতা যেখানে বিপন্ন, সেখানে শুধু স্বীকৃতি দিয়ে দায় এড়ানো সুযোগ নেই। তাই আমাদের প্রত্যাশা যেসব দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তারা ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। অন্যথায় বিশ্ববাসী এ স্বীকৃতিকে একটি রাজনৈতিক প্রহসন হিসেবে দেখবে।
মন্তব্য করুন