বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২
মোস্তফা কামাল
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:০৬ এএম
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সিন্ডিকেট গুণে পেঁয়াজে আলুর দোষ

সিন্ডিকেট গুণে পেঁয়াজে আলুর দোষ

রাজনীতি যার যার হলেও অর্থনীতিকে সবার করতে না পারার পরিণামে এক কঠিন পরিণতির সন্ধিক্ষণে দেশ। টানা কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর আবার সেই হরতাল-অবরোধ ফিরে আসায় রাজনীতির এ অস্ত্রগুলো অর্থনীতির জন্য সর্বনাশা। গত দিনকয়েক এ সর্বনাশের পারদটি এখন তুঙ্গে থেকে তুঙ্গে। নিত্যপণ্যের বাজারের পাগলা দানব আলু থেকে পেঁয়াজ-মরিচ-শুঁটকি সব একাকার-ম্যাচাকার করে ছাড়ছে। আলু-পেঁয়াজ নির্দোষ, এরা দোষ করতে জানে না। কিন্তু দোষীসাব্যস্ত হয় মানুষ নামের জীবদের কারণে। আলুর দোষ-পেঁয়াজের দোষ ধরনের বাংলায় কিছু শব্দ বা শব্দযুগলের প্রচলনও আছে।

আলু দিয়ে ভাতের ওপর চাপ কমানোর রাজনৈতিক পরামর্শ অনেক দিনের। এখন সেই আলুর ওপরই চাপ কমানোর প্রশ্ন। কিন্তু, বিকল্প আবিষ্কার হয়নি এখনো। তার ওপর দোষাদোষিতে আলুর দোষ-পেঁয়াজের দোষ তালাশ। চলনে-বিচলনে এখন বলা হচ্ছে বর্ষাকালে পেঁয়াজের একটু আলুর দোষ হয়। আলু বা পেঁয়াজের দোষ খোঁজাখুঁজিতে চাল, তেল, সবজির দাম সাধারণ ক্রেতাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। এগুলো পুরোদস্তুর সিন্ডিকেটের কবজায়। তারা অধরা, নিয়ন্ত্রণমুক্ত। দুর্নীতি, চুরি, হরিলুট, ব্যাংকলুট, অর্থ পাচার, মূল্যস্ফীতি কিছুই নিয়ন্ত্রণে নেই। নিয়ন্ত্রণে শুধু কিছু দল।

চলমান রাজনৈতিক দুর্যোগটি সিন্ডিকেটের কাছে একটি সুযোগ। আর ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশের চার কোটির বেশি মানুষ ইউরোপের স্ট্যান্ডার্ডে বাস করে। তার কাছে এ-সংক্রান্ত তথ্য-সাবুদ থাকতেও পারে। তা মেনে নিলেও অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। তাদের জীবন দুর্বিষহ। সামর্থ্যবানরা টাকা সরিয়ে ডলার কিনে রাখছে। করছে অর্থ পাচার। রাজনীতির নানা বিষয়ে পথেঘাটে কচলানি বা প্যাচাল থাকলেও রাজনীতি এখন মানুষের জন্য বিরক্তিকর আইটেম। সাধারণ মানুষ এর থেকে পরিত্রাণ চাইছে। অথচ মাঠে নামছে না। কেন নামছে না, তা আরেক প্রশ্ন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আর সেইসঙ্গে আয় কমে যাওয়ায় মানুষ দিশেহারা। তার ওপর মানুষের নৈতিকতায়ও বেদম অবনতি। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই এখন অর্থের পেছনে ছুটছে। এতে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, দরিদ্ররা রাষ্ট্রীয় অর্থব্যবস্থা সম্বন্ধে অজ্ঞ থাকায় এ দৌড়ে জিততে না পেরে আরও দরিদ্র হচ্ছে। এর মধ্যেও আমাদের জাতীয় আয়ের দক্ষ ব্যবস্থাপনা থাকলে এ পরিস্থিতি নাও হতে পারে। ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দল কারও মধ্যেই এ বিষয়ে কোনো এজেন্ডা নেই। ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতাহীন বিরোধী দলকে মোকাবিলায় যে সক্ষমতা দেখাচ্ছে, এর ছিটেফোঁটাও বাজার সিন্ডিকেট বা শুধু আলু সিন্ডিকেটের পেছনে দিত, নিশ্চয়ই আলুর কেজি অন্তত ৫০ টাকায় উঠত না। একইভাবে বিরোধী দলটি তামাশা না দেখে পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে টুকটাক শব্দ করলেও পণ্যটির কেজি ১৩০ টাকায় পৌঁছত না, যা কথিত সিন্ডিকেটের জন্য পরম আশীর্বাদ।

দায়িত্ব না নিয়ে শুধুই সমালোচনা আর তামাশা দেখার এ চর্চায় দুই হাতে অর্থ হাতানোর পদ্ধতিতে চাহিদা, জোগানের পরিমাণ; কে সরবরাহকারী-বিপণনকারী, কে ভোক্তা; এসবের কোনো বালাই থাকছে না। সবাই শিকারি। শিকার ধরাই আসল। বাজার নিয়ন্ত্রক সিন্ডিকেটের কাছে বাদবাকিরা শুধুই শিকারের বস্তু। বাজার চড়ানোর পেছনে শীত-গরম, বৃষ্টি-খরা, মন্দা-যুদ্ধ, হরতাল-অবরোধসহ হরেক অজুহাত তারা হাতে হাতেই রাখে। বাজারে চাহিদার বিপরীতে জোগান কমে যাচ্ছে নাকি কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে—তাও বিবেচনার বিষয়। ব্যবসায়ী নেতারাই বলছেন, সব পণ্য দ্রব্যই মজুত আছে, নাটক চলছে কৃত্রিম সংকটের। এ কাজে সিন্ডিকেটের দারুণ সমন্বয়। মলম পার্টির মতো তাদের জোরজবরদস্তি করা লাগছে না। ম্যাজিকের মতো মানুষই নিজের চোখে নিজে মলম মেখে বোবা কান্না কাঁদতে বাধ্য হচ্ছে। একবার পেঁয়াজ আরেকবার মরিচ, কখনো ডিম তো কখনো মুরগি! এক মাসে তেলে আর ডালে, আরেক মাসে আলু-পেঁয়াজে চক্রাকারে চক্রশূলে চড়ছে। কোনো রাজ্যে অনিয়ম-নৈরাজ্য নিয়মের মধ্যে পড়ে গেলে সেখানে আগুন-পানিও আর নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। এটি একদম অঙ্কের মতো। অবস্থা এমন হয়ে গেলে হাঁস-মুরগি পাহারায় শিয়ালকে নিযুক্ত করলে যা হয়, চিতা-কোবরাকে পাহারাদার নিযুক্ত করলেও একই ফল হয়। এদের কাছে দেবালয় আর লোকালয় বাছবিচার নেই। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশেও তা কিছুদিন চলেছে। কেউ ক্ষমতায় আছেন, আরও থাকবেন বলে ছক আঁকছেন। তাদের উভয়ের মন-মনন, মানসিকতা, কথা-কাজ বোঝার কারও বাকি নেই। যার মধ্য দিয়ে তারা শেয়ানের ওপর শেয়ান। তারাই আলুবাজ, তারাই পেঁয়াজবাজ। এই গুণে চাল-ডাল, শুঁটকিও তাদের আয়ত্তে।

তারপরও বাংলা অভিধানে আলুর দোষ-পেঁয়াজের দোষ বহাল আছে। তবে সংজ্ঞা নেই। উদাহরণে বলা আছে, ‘নারীর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি।’ আর আসক্তজন হচ্ছে পুরুষ। তার মানে এই নয় যে, নারীর প্রতি অতি আসক্তরা বেশি বেশি আলু বা পেঁয়াজ খায়। সুকুমার রায় সৎপাত্র হিসেবে গঙ্গারাম নামের যে যুবকটিকে জনসমক্ষে উপস্থাপন করেছেন, সে পাত্র ভালো, আর যা-ই হোক, পেঁয়াজের দোষ নেই। সুকুমারের আমলের পেঁয়াজের দর যাচাই করলেই সত্যটা ধরা পড়বে! গঙ্গারাম পেঁয়াজ খেলে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ত; কিন্তু জোগান একই থাকায় দাম বেড়ে যেত।

বাংলাদেশের বিজনেস সিন্ডিকেটের কাছে শুধু আলু-পেঁয়াজ নয়, লতি-শুঁটকিতেও ছাড় নেই। মৌসুম এবং প্রাকৃতিক কারণে কখনো কখনো কোনো কোনো কৃষিপণ্য কৃষক এবং সাধারণ মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। হালে যুগল তালিকায় দুটি কৃষিপণ্য আলু ও পেঁয়াজ। আলু সবকিছুতেই লাগে। পেঁয়াজ আলুর তুলনায় কম লাগলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য। আলু বেশিরভাগ সময়ই সবজির বিকল্প হিসেবে খেতে হয়। পেঁয়াজ মসলা হিসেবে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এক বছর ধরে বাজারে আলুর দাম ক্রমহ্রাসমান হয়ে খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রায় তিন-চার মাস ধরে পেঁয়াজের মূল্যের ক্রমবর্ধমান অবস্থা সব আয়ের মানুষকে তাদের পারিবারিক বাজেট একহাত করে ক্ষতির সম্মুখীন করে দিয়েছে। অথচ, মাঝেমধ্যে এমন খবরও এসেছে, এক মণ আলু দিয়ে মাত্র আধা কেজি পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে।

গত মাসে সরকার যখন দেশের ইতিহাসে প্রথমবার ডিম-আলু-পেঁয়াজের মতো কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে, তখন সেটি যেমন অনেককে আশান্বিত করেছিল, তেমনি এর বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশের লোকেরও অভাব ছিল না। আর এরপর মাস পার না হতেই সংশয় যেন সত্যি মনে হচ্ছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি পিস ডিমের দাম কোনোভাবেই ১২ টাকার বেশি হবে না। অথচ ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের এখন ডিম কিনতেই খরচ পড়ছে ১২ টাকার ওপর। গত বৃহস্পতিবার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি ডজন ডিম কিনতে ক্রেতাদের খরচ হচ্ছে ১৬০ টাকার মতো। আলুর বাজারেও একই অবস্থা। সরকারের ৩৫ টাকা কেজি মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া আলুর সর্বনিম্ন মূল্য এখন ৬০ টাকা। আলু যখন হাফসেঞ্চুরি পার করেছে তখন সেঞ্চুরি করে ফেলছে পেঁয়াজ। দেশি পেঁয়াজের দাম আরও বেশি। ক্রেতা, বিক্রেতা এবং বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের দাম নির্ধারণ করে ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার’ চেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। মধ্য সেপ্টেম্বরে ডিম, আলু ও পেঁয়াজ—এ তিন পণ্যের দাম ঠিক করে দেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন রেকর্ড।

বাস্তবতা হচ্ছে, চাহিদা ও জোগানের ওপর নির্ভরশীল জিনিসের দাম বেঁধে দিলে তা খুব বেশি কাজে আসে না। আলু কোল্ডস্টোরেজে রাখা যায় কিন্তু কাঁচামরিচ তো রাখা যায় না, তাহলে এটার কেন এত দাম বাড়ল। তাহলে সমস্যাটা প্রোডাকশনে। উৎপাদন যে কোনটার আসলে কত, সেটার কোনো সঠিক হিসাব নেই, একটার সঙ্গে আরেকটা মেলে না। এ কারণেই দাম বেঁধে দিলে তা কোনো কাজে আসছে না, কারণ সমস্যাগুলো থেকেই যাচ্ছে। পণ্য আমদানি থেকে বিক্রির প্রতিটি পর্ব এখন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। রসুনের মতো গুণ তাদের। সবার কোষ এক জায়গায়। বাজারের নিয়ম অনুযায়ী, পণ্য আমদানি ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার বদলে তারা একে অন্যের সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়ে পণ্য আমদানির প্রতিটি পর্যায়ে তাদের কর্তৃত্ব তৈরি করেছে। এর ফলে বাজারের ওপর একক ‘কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা’ হয়েছে তাদের, যার জের ধরে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে ভোক্তারা। তারা ফাঁদে আটকে ফেলছে সরকারকেও। আবার ডলারের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণে বিপদে পড়েছেন ছোট আমদানিকারকদের অনেকে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের এসব আমদানিকারকের অনেকেই এখন ডলার সংকট আর কথিত সিন্ডিকেট চক্রের সম্মিলিত ‘আগ্রাসনে’ টিকতে না পেরে সরে দাঁড়াচ্ছেন দীর্ঘদিনের আমদানি বাণিজ্য থেকে। পেঁয়াজ আর আলু এখানে প্রতীক মাত্র। চাল, ডাল, তেল, কাঁচামরিচসহ নিত্যপণ্যের বাজারে লাগাম টানার চেষ্টায়ও পেরে উঠছে না সরকার। চেষ্টায়-কৌশলে যে সরকারের কোনো কমতি আছে তাও নয়। সরকারের সৌভাগ্য হচ্ছে, মানুষ বিরক্ত হলেও ক্ষেপছে না। ক্ষোভ-বিক্ষোভে রাস্তায় নামছে না। এ ছাড়া এক ইস্যু আরেক ইস্যুকে বরবাদ করে দিচ্ছে। ইস্যুর জটও লাগছে। চালের পর ডাল, ডালের পর তেল। পেঁয়াজের মধ্যেই নতুন যোগ আলু। অথচ বাজারে সবই আছে। কোনোটারই আকাল নেই। ঘাটতি নেই সরবরাহেও। পুরোটাই কারসাজি। গত বছর কয়েক দিন চাল, তেল, পেঁয়াজ নিয়ে এ কারসাজির সঙ্গে মানুষ বন্দির মতো সন্ধিদশায়। সরকারও বেকায়দায়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দেখিয়ে দিতে পারলেও পেরে ওঠে না এই চক্রের সঙ্গে।

লেখক : ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৭ বছর পর শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারত করলেন খালেদা জিয়া

ফার্মগেটে ককটেল বিস্ফোরণ

কালবেলার সংবাদের পর স্বপ্নের রঙিন ঘরে শাহারবানু

আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিতে কাজ করছে জামায়াত : মুজিবুর রহমান

রাজধানীতে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারের রেকর্ডেড ভিডিও প্রদর্শন

জবাব দিতে পিএসসিকে আলটিমেটাম

অসদাচরণের অভিযোগে বদলি চিকিৎসক দম্পতি

সড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ

শহীদ জিয়ার মাজারে দোয়া করলেন খালেদা জিয়া

নোয়াখালী বিভাগ চাইলেন ‘কাবিলা’

১০

বেথ মুনির রেকর্ডে অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত জয়

১১

‘বিষাক্ত মদ’ পানে সংরক্ষিত ইউপি সদস্যের স্বামীর মৃত্যু

১২

বিদায় নিচ্ছে মৌসুমি বায়ু, বৃষ্টি নিয়ে নতুন তথ্য

১৩

ঢাকা উত্তর সিটিতে জন্মনিবন্ধন ছাড়াই টাইফয়েড টিকা মিলবে

১৪

শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারতে খালেদা জিয়া

১৫

জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ নারী ফুটবল দলকে গণসংবর্ধনা

১৬

দুই বছর আগের মামলায় নতুন করে ‘আসামি’ সাংবাদিক

১৭

বদলির আদেশের ৩ সপ্তাহ পরও অফিস করছেন রাসিক সচিব

১৮

অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ মারা গেছেন

১৯

চার দিন ধরে নিখোঁজ বিকাশ কর্মী ওমর ফারুক

২০
X