কেনাকাটায় পণ্য অথবা সেবার দাম নির্ধারণে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘বালিশ’ ও ‘পর্দা’ কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন প্রকল্পে পণ্য ও সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে উচ্চমূল্য নির্ধারণের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। কিন্তু কোনোমতেই থামানো যাচ্ছে না কেনাকাটায় দুর্নীতি। একের পর এক ঘটছে মাত্রাহীন দুর্নীতির খবর। রূপপুরের আলোচিত বালিশকাণ্ডের কথা যখন সবার মুখে মুখে ঘুরছিল, তখন একই ধরনের পুকুর চুরির ঘটনা ঘটে পায়রা সেতুর (লেবুখালী) নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে। সেখানে বর্তমান বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকার রেইনট্রি গাছের মূল্য ও ক্ষতিপূরণ বাবদ মোট মূল্য ধরা হয় ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার পায়রা সেতুর (লেবুখালী) নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণে ঘটে এমন ঘটনা। এমন পুকুর চুরির ঘটনা এখন প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে শুরু হয় নানামুখী আলোচনা ও সমালোচনা। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। সোমবার কালবেলায় এমনই একটি পুকুর চুরির খবর প্রকাশ হয়েছে। খবরটি রাজধানীর উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে কেনাকাটা-সংক্রান্ত। এ হাসপাতালটি রাজধানীর উত্তরা এবং আশপাশের এলাকার গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের চিকিৎসা গ্রহণে মূল ভরসা। অথচ এ হাসপাতাল ঘিরে চলছে সীমাহীন অনিয়ম আর দুর্নীতির মহোৎসব। এর মধ্যে দন্ত ও প্যাথলজি বিভাগের জরুরি পণ্য কেনাকাটায় বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে। দাঁতের রুট ক্যানেলের পর ফিলিং করতে সিলভার অ্যালয় নামে এক ধরনের ধাতবের প্রয়োজন হয়। বিদেশ থেকে আমদানি করা ৩০ গ্রাম সিলভার অ্যালয়ের বাজারদর আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। কিন্তু কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালের জন্য সেই পণ্য কেনা হয়েছে লাখ টাকায়। ২০০ টাকার টেম্পারেচার চার্ট হোল্ডার কেনা হয় সাড়ে ৫ হাজার টাকায়। কয়েকগুণ দামে হলেও এসব পণ্য তবু কেনা হয়েছে, এক্স-রে ফিল্ম না কিনেই ভুয়া বিল করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রচার ও বিজ্ঞাপন খাতের টাকা লোপাট হয় ভুয়া সাইনবোর্ডের নামে। মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ক্রয়সহ কেনাকাটায় রয়েছে আরও নানা অনিয়মের অভিযোগ। স্বাস্থ্য খাতে সব ধরনের কেনাকাটা, নিয়োগ, পদায়ন, বদলিসহ এমন কোনো কাজ নাকি নেই, যেখানে অনিয়ম-দুর্নীতি হয় না। একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারের সমন্বয়ে স্বাস্থ্য খাত ঘিরে অপ্রতিরোধ্য যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, সর্বত্র তাদের সরব পদচারণা লক্ষ করা যায়।
কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিযোগের বিষয়টি জেনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে কেনাকাটায় অনিয়মের একটি অভিযোগ এসেছে তাদের কাছে। অভিযোগের বিষয়ে ফাইল উত্থাপনের জন্য শৃঙ্খলা শাখার সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিগগির ফাইল উত্থাপন করা হবে। ফাইল উত্থাপনের পর বিশ্লেষণ করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। আমরা মনে করি, দুর্নীতি হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অগ্রগতি ও দারিদ্র্য বিমোচনের প্রধান অন্তরায়। সুতরাং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। দেশের স্বাস্থ্য খাতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিস্তৃতি রোধ করতে হলে এমন আইন প্রণয়ন করা উচিত, যাতে দুর্নীতিবাজরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। তবে শুধু আইন নয়, দেশ থেকে দুর্নীতির মাত্রা কমাতে জনসচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি।