হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে মনুমেন্টালের গ্যালারিতে হাজির ৮০ হাজার দর্শক! কিক-অফের আগেই আবেগঘন লিওনেল মেসি—ওয়ার্মআপে নেমে কাঁদলেন, কাঁদলেন জাতীয় সংগীত বাজার সময়ও। এসব যদি আর্জেন্টাইন তারকার বিদায়ী লক্ষণ ফুটিয়ে তোলে, মেসির কথায় আশাবাদী হওয়ার চিহ্নটা কীভাবে উপেক্ষা করবেন—‘আমি খেলতে ভালোবাসি। চাই না এটা এখনই শেষ হোক।’ ২০০৫ সালের ৯ অক্টোবর পেরুর বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আর্জেন্টিনার জার্সিতে প্রথমবার একাদশে দেখা গেছে মেসিকে। ১৯ বছরের মেসি পেনাল্টি জিতে সে ম্যাচে ছিলেন হুয়ান রিকুয়েলমের স্পটকিক থেকে করা গোলের নেপথ্য কারিগর। ১৯ বছর ১০ মাস ২৮ দিন পর সেই মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামেই মেসি ছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্র। সেদিন গ্যালারিতে হাজির হওয়া ৩৬ হাজার ৯৭৭ দর্শকের অনেকেই হয়তো গতকালও হাজির হয়েছিলেন। যাদের প্রত্যাশা আরও কিছুদিন এ তারকা মাঠে থাকুক!
ভক্তদের সে চাওয়া পূরণ হতে পারে যদি বাস্তবতা এবং মেসির ফুটবল উপভোগ এক রেখায় মেলে। গতকাল ম্যাচের পর কিন্তু সে কথাই বললেন ৩৮ বছর বয়সী ফুটবলার, ‘বয়স অনুযায়ী সম্ভবত প্রায় শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি। আমি উচ্ছ্বসিত, আগ্রহী। আমি সবসময় বলেছি, দিন হিসাব করে এগোতে চাই। কয়েকদিন বিশ্রামে ছিলাম, ফিরেছি, কিছুটা অস্বস্তি ছিল। টানা তিন ম্যাচ খেলতে পেরেছি। আমি ভালো অনুভব করার চেষ্টা করছি এবং নিজের সঙ্গে সৎ থাকার চেষ্টা করছি। ভালো বোধ করলে ফুটবলটাও উপভোগ করি, না হলে কষ্ট হয়।’
মেসির ওপরের কথাতেই পরিষ্কার—খেলাটা উপভোগ করলে আরও কিছুদিন চালিয়ে যাবেন, নয়তো সত্যিই ঘরের মাঠে শেষ ম্যাচটা খেলে ফেললেন খুদে জাদুকর! এটা পরিষ্কার ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে দ্বৈরথকে সম্ভাব্য বিদায়ী ম্যাচ হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন মেসি। কারণ এদিন গ্যালারিতে হাজির ছিল তার গোটা পরিবার। জাতীয় সংগীত চলাকালে পাশে ছিল তিন ছেলে—থিয়াগো, মাতেও ও সিরো। স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো, বাবা হোর্হে এবং মা সেলিয়াও হাজির ছিলেন, জাতীয় সংগীত চলাকালে মেসির মতো তারাও কাঁদছিলেন।
আবেগের এ ম্যাচ উপভোগ্য করে তুলেছিলেন মেসি। উপহার দেন অসাধারণ নৈপুণ্য। শুরুর দিকে কিছুটা জড়তা ছিল, হয়তো আবেগে মনোযোগ হারিয়েছিলেন। কয়েকবার বল হারিয়েছেন, যা মেসির জন্য অস্বাভাবিক। কিন্তু প্রথম গোল তাকে ফিরিয়েছে চেনা ছন্দে। দ্বিতীয়ার্ধে তিনি আরও প্রাণবন্ত ছিলেন।
বুয়েন্স আয়ার্সের আবেগের ভেলায় পা রাখার মঞ্চটা কিন্তু মেসির জন্য মোটেও সহজ ছিল না। আর্জেন্টিনার জার্সিতে বারবার বা হড়কানোর সে দুঃসহ সময়কে স্মরণ করলেন ম্যাচের পর, ‘এ মাঠে অনেক স্মৃতি রয়েছে—কিছু ভালোও, কিছু ভুলতে চাওয়ার। দেশবাসীর সঙ্গে উদযাপন করছি—এভাবে শেষ করতে পারা আমার স্বপ্ন ছিল। বহু বছর বার্সেলোনার ভালোবাসা পেয়েছি, কিন্তু আমার স্বপ্ন ছিল নিজের দেশে তা পাওয়ার।’
সত্যিই যদি শেষ ম্যাচ হয়ে থাকে, তা দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবে সমর্থকদের হৃদয়ে! ম্যাচটা মেসি পুরোপুরি উপভোগ করেছেন, সবাইকে উপভোগ করতে দিয়েছেন—বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে অভিষেকের ২০ বছর পর, লিওনেল মেসি ১৯ বছর বয়সের মতোই ছিলেন ঝলমলে।
মন্তব্য করুন