এবার ইসরায়েলের ফুটবলকে নিষিদ্ধ করতে ইউরোপিয়ান ফুটবল সংস্থার (উয়েফা) প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার শেফেরিনকে চিঠি দিয়েছেন ৩০ আইনজীবী। চিঠিতে ফিলিস্তিনের ওপর চলমান বর্বরতা বন্ধ না করা পর্যন্ত ইসরায়েল জাতীয় ও ক্লাব দল এবং ফুটবলারদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘উয়েফা নির্বাহী কমিটি এবং সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে তারা আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে তাদের দায়িত্ব পালন করুক। অবিলম্বে ও সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলি ফুটবলকে নিষিদ্ধ করুক। যতক্ষণ না ফিলিস্তিন এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। ততদিন পর্যন্ত জাতীয় দল, ক্লাব দল এবং খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধ করা হোক। আমরা জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একমত যে উয়েফা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীন এবং জাতিসংঘের ব্যবসা ও মানবাধিকার সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণ করতে বাধ্য।’
আরও বলা হয়েছে, ‘২০২৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী কমপক্ষে ৪২১ জন ফিলিস্তিনি ফুটবলারকে হত্যা করেছে এবং গাজার স্টেডিয়াম, জিমনেসিয়াম এবং ফিলিস্তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সদর দপ্তর ধ্বংস করেছে। এই কর্মকাণ্ড একটি সম্পূর্ণ প্রজন্মের ক্রীড়াবিদদের নিশ্চিহ্ন করেছে এবং ফিলিস্তিনি ক্রীড়ার ভিত্তিকে ধ্বংস করেছে। ইসরায়েল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এই লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারাও নিপীড়ন ব্যবস্থার অংশ হয়ে উঠেছে এবং উয়েফার প্রতিযোগিতায় তাদের অংশগ্রহণ অগ্রহণযোগ্য।’
আইনজীবীরা চিঠিতে বলেছেন, ‘ইসরায়েলি ফুটবল সংস্থাকে নিষিদ্ধ করা উয়েফার অতীত সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধে জড়িত দেশগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়ার অখণ্ডতাকে রক্ষা করে। জাতিসংঘের তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন এবং আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের ২০২৪ সালের ১৯ জুলাইয়ের উপদেষ্টা মতামতে বলা হয়েছে, ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, ইসরায়েলের লঙ্ঘনের পদ্ধতিগত প্রকৃতি তুলে ধরে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফার পরিকল্পনার প্রসঙ্গ টেনে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি গাজার জন্য ২০ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এই পরিকল্পনা শান্তির পথ দেখানোর দাবি করলেও বাস্তবে এটি আন্তর্জাতিক আইন, ফিলিস্তিনি সার্বভৌমত্ব এবং আত্মনির্ধারণের নীতিকে ক্ষুণ্ন করে। গাজায় গণহত্যার আইনি পরিণতি বা ফিলিস্তিনিদের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি তোলে না। ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি ছাড়া শান্তি অর্জন সম্ভব নয়।’
কেন উয়েফার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে উয়েফা থেকে নিষিদ্ধ করা জরুরি এবং আইনগতভাবে প্রয়োজনীয়। ইসরায়েলি দলগুলোকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে উয়েফা যুদ্ধাপরাধকে স্বাভাবিক করার ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা উয়েফার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন ক্রীড়ার অখণ্ডতা রক্ষা করে এবং অবিলম্বে ইসরায়েল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও সংশ্লিষ্ট সব দলকে উয়েফার প্রতিযোগিতা থেকে স্থগিত করে; যতক্ষণ না ইসরায়েল গণহত্যা ও অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধ করে এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন তার বাধ্যবাধকতা পূরণ করে। ফুটবল যেন ন্যায়বিচারের প্রতীক হয়, অন্যায়ের নয়।’
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন আইন, মানবাধিকার এবং মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতিবিষয়ক বিশিষ্ট অধ্যাপক, আইনজীবী ও গবেষকরা।
মন্তব্য করুন